Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Meter Box

Meter box: মাসিক ভাড়ায় খুঁটি থেকে মিটার বক্স, শহর জুড়ে অপেক্ষায় বিপদ

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর একের পর এক ঘটনায় জানা যায়, রাস্তার ধারের খুঁটি ছুঁয়ে ফেলাতেই অঘটন।

বিপজ্জনক: বি বা দী বাগ চত্বরে খোলা জাংশন বক্স।

বিপজ্জনক: বি বা দী বাগ চত্বরে খোলা জাংশন বক্স। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ০৭:১১
Share: Save:

খুঁটি কার?

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর একের পর এক ঘটনায় জানা যায়, রাস্তার ধারের খুঁটি ছুঁয়ে ফেলাতেই অঘটন। কিন্তু সেই খুঁটি কার, তার উত্তর মেলে না। বিদ্যুৎ সংস্থা জানিয়ে দেয়, বিদ্যুৎবাহী তার মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে। ফলে খুঁটির দায় তাদের নয়। পুরসভাও বলে দেয়, খুঁটি তাদের নয়। কখনও বলা হয়, অতীতে ওই খুঁটি ব্যবহার হলেও এখন হয় না। একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, কিন্তু শাস্তির নজির দেখা যায় না। অভিযোগ, এক মিটার বক্সে গাদাগাদি করে অসংখ্য মিটার ঢুকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি হরিদেবপুরের পরে নারকেলডাঙাতেও রাস্তার ধারের খুঁটি ছুঁয়ে ফেলায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এমনটা ঘটেছে শহরতলির নানা জায়গাতেও। প্রশ্ন উঠেছে, তেমন বৃষ্টি হওয়ার আগেই এই অবস্থা হলে, পরে বৃষ্টি বাড়লে কী হবে? মঙ্গলবারই দোকানের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে ট্যাংরায়। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে বস্তি এলাকায় একটি মিটার বক্সের মধ্যে অনেক মিটারের উপস্থিতি নিয়ে। এই সূত্রেই শহরের নানা প্রান্তে খোঁজ নিয়ে জানা গেল খুঁটি এবং মিটারবক্স-দুর্নীতির কাহিনি। এলাকার দাদাকে টাকা দিলেই যেমন খুশি খুঁটি ব্যবহারের সুযোগ মেলে। বিনা আর্থিং-এ হুকিং করে বিদ্যুৎ নিলেও কিছু বলার থাকে না। টাকা দিলেই এক মিটার বক্সে ঢোকানো যায় যত খুশি মিটার!

এ শহরে পুরসভার প্রায় তিন লক্ষ খুঁটি রয়েছে। এ ছাড়া, সিইএসসি, কেএমডিএ এবং অতীতে টেলিফোন সংস্থার বসানো খুঁটিও রয়েছে। এক পুর আধিকারিক জানান, টেলিফোনের খুঁটি এখন কাজে লাগে না, তাই সেগুলি দখল হয়ে যায়। যে এলাকায় যে দাদার ক্ষমতা বেশি, তিনিই ঠিক করেন, খুঁটি কী কাজে ব্যবহার করা হবে। কোথাও ভাড়া নিয়ে তিনি খুঁটি ব্যবহার করতে দেন কেব্‌ল সংস্থাকে। কোথাও তা দেওয়া হয় বস্তির লোকেদের ব্যবহারের কাজে। ওই আধিকারিক জানান, নিয়ম অনুযায়ী, পুরসভার খুঁটি ব্যবহার করলে তার জন্য ভাড়া দেওয়ার কথা। কিন্তু দাদাকে টাকা দিলেই এই ঝক্কি থাকে না।

এক পুর আধিকারিকের দাবি, ‘‘পুরনো খুঁটি না তুলেই নতুন আলো লাগানোর নাম করে বহু জায়গায় খুঁটি বসানো হয়। এলাকার পুর প্রতিনিধি ও তাঁর লোকজনই ঠিক করেন, নতুন খুঁটি কোথায় বসবে! এর পরে অব্যবহৃত খুঁটির দখল নেন তাঁরা। শুরু হয়ে যায় ভাড়া ব্যবসা।’’ অভিযোগ, কেউ পুরনো খুঁটি থেকে হুকিং করে আলো লাগান, কেউ খুঁটির গায়ে তার ঝুলিয়ে পাম্প লাগিয়ে জল তোলেন। সেই কাজে না থাকে তারের কেসিং, না থাকে আর্থিং।

মেয়র পারিষদ (বস্তি উন্নয়ন) স্বপন সমাদ্দার বললেন, ‘‘এই জন্যই বৃষ্টির সময়ে খুঁটিগুলো বিদ্যুদয়িত হয়ে থাকে। এ সব বন্ধ করতে হবে। আগামী ১০ দিনে সমস্ত ওয়ার্ডে খুঁটি ধরে ধরে আর্থিং, কেসিং-সহ সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক জন করে ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। পরে কিছু ঘটলে তিনিই দায়ী থাকবেন।’’

কিন্তু মিটার বক্সের দুর্নীতি বন্ধ হবে কী ভাবে? সিইএসসি-র কলকাতা জ়োনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তার কথায়, ‘‘এমন বহু পাড়া রয়েছে, যেখান থেকে অভিযোগ পেয়েও কর্মীরা ঢুকতে পারেন না। এলাকার দাদারা টাকা নিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে সেখানে যথেচ্ছ সংখ্যায় মিটার ঢুকিয়ে দেন। বৃষ্টি হলেই জল চুঁইয়ে সেই ঘরে ঢুকে আগুন ধরে যায়। পুলিশে গিয়েও লাভ হয় না।’’

মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, ‘‘কমিটি তদন্ত করছে। সব দিক দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’ কিন্তু আগেই কেন কড়া পদক্ষেপ করা হল না? মেয়র পারিষদ (বিদ্যুৎ ও আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সীর মন্তব্য, ‘‘একসঙ্গে অনেকটা বাজার করে আনলে কয়েকটা পচা আনাজ তো থাকবেই। কিন্তু এখন থেকে দল তৈরি করে ঘুরে ঘুরে সব ঠিক করে দেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Meter Box
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy