তদন্ত: ধৃতদের নিয়ে খুনের পুনর্নির্মাণে পুলিশ।
রামুয়ার মাথায় গুলি করার সময়ে তা দেখতে চায়নি স্ত্রী। আট বছরের ঘুমন্ত মেয়েকে বুকে জড়িয়ে সে তাই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিল!
রামুয়া খুনের তদন্তে তার স্ত্রী কাজলকে জেরা করে এমনই জেনেছে পুলিশ। আরও জানা গিয়েছে, কাজল নিজেই ছেলে সমীরকে ৭.৬২ পিস্তলটি বার করে দিয়েছিল। যা সমীর তুলে দেয় ভিন্ রাজ্যের তিন যুবক শ্যামসুন্দর রাও, বিশাল মেনন ও প্রশান্ত সিংহের হাতে। এমনকি হাওড়ার কুখ্যাত ওই দুষ্কৃতীকে খুনের জন্য শুধু পিস্তল নয়, ব্যবস্থা ছিল ইটেরও। সেটাই ছিল দুষ্কৃতীদের ‘প্ল্যান বি’। সোমবার ধৃতদের নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণে এমনও তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের সামনে।
খড়দহ থানার ওসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্তকারীদের একটি দল এ দিন শ্যামসুন্দর, বিশাল ও প্রশান্তকে নিয়ে সোদপুরের অমরাবতী এলাকায় যায়। রামুয়ার ফ্ল্যাটে ঢোকার রাস্তার আগে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে গিয়ে বিশাল ও শ্যাম দেখায়, সেখান থেকেই তারা ইট নিয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার রাতে সাড়ে ১২টা নাগাদ একটি অ্যাপ-ক্যাব ধরে অমরাবতীর মোড়ে পৌঁছেছিল শ্যাম ও বিশাল। সেখানে পৌঁছে তারা সমীরের মোবাইলে মিস্ড কল দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ হয়ে গেলেও সমীরের থেকে ফোন না পেয়ে শ্যামেরা ভেবেছিল, রামুয়ার পিস্তলটি পাওয়া যায়নি। তখনই ইট জোগাড় করে তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, শ্যামেরা কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির মধ্যেই সমীর তাদের ফোনে জানায়, ‘বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে, তোমরা চলে এস।’ ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে শ্যামেরা দেখে, দরজা খুলে অপেক্ষা করছে সমীর। তার হাতে রামুয়ার কেনা নতুন পিস্তল। বিশাল সেটি নিয়ে নেয়। আর ইটটি আবাসনে ঢোকার রাস্তার পাশে রেখে দেয় শ্যাম। এর পরে তিন জন উপরে উঠে যায়। সে সময়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রামুয়া মেঝেতে ঘুমোচ্ছিল। মাথা ছিল এক দিকে কাত করা। ঘরে ঢুকে বিশাল রামুয়ার কানের ভিতরে পিস্তলের নল ঢোকাতেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় কাজল। কিন্তু, প্রথম গুলিটি চালালেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর পরে বিশাল দ্বিতীয় গুলিটি চালায়। তাতেই রামুয়ার কান দিয়ে গুলি ঢুকে মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়।
রামুয়ার ফ্ল্যাটে উদ্ধার হয়েছে এই কার্তুজগুলি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
জেরায় অভিযুক্তেরা পুলিশকে জানিয়েছে, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া গুলিটি ও পিস্তল নিয়ে তারা বেরিয়ে আসে। ফের একটি অ্যাপ-ক্যাবে উঠে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দিকে যাওয়ার সময়ে রাস্তার ধারে বড় নর্দমায় গুলিটি ফেলে দেয় বিশাল। এ দিন পুনর্নির্মাণের সময়ে সে নিজেই ওই নিকাশি নালা থেকে গুলি বার করে। ধৃতেরা পুলিশের কাছে দাবি করেছে, রামুয়া যে এত বড় দুষ্কৃতী তা সমীর তাদের জানায়নি। সে শুধু জানিয়েছিল, বাবার নেশার জন্য টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংসারে অশান্তি হচ্ছে। তাই তাকে সরিয়ে দিতে হবে। আর সে জন্যই শ্যামেরা মনে করেছিল, নেশাগ্রস্ত এক ব্যক্তিকে মারতে পিস্তল পাওয়া না গেলে ইট-ই যথেষ্ট। সেই ইটটিও উদ্ধার হয়েছে।
পাশাপাশি, এ দিন কাজল ও সমীরকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের পরে গুলি ও সেটির খোল কী ভাবে জানলা দিয়ে ফ্ল্যাটের পিছন দিকে ফেলেছিল, তা দেখায় সমীর। যদিও সেই গুলি ও খোল এখনও মেলেনি। রামুয়া কোথায় পিস্তল রাখত, তা দেখায় কাজল। সেই মতো দেওয়ালে ঝোলানো পোশাকের মধ্যে থেকে একটি গাঢ় গোলাপি রঙের হাতব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। তাতেই গজে মোড়া প্লাস্টিকের প্যাকেটে রাখা ছিল ৪০ রাউন্ড কার্তুজ।
কাজল তদন্তকারীদের জানিয়েছে, খড়দহের বিবেকনগরে থাকার সময়ে তার সঙ্গে রামুয়ার পরিচয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সে পালিয়ে গিয়ে রামুয়াকে বিয়ে করে। বিয়ের ৪২ দিনের মাথায় কাটা মুণ্ডু মামলায় রামুয়াকে গ্রেফতার করে হাওড়া পুলিশ। এর পরে টানা ১১ বছর দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। কাজল আরও জানিয়েছে, বিয়ের পরেই সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল। জন্মের পরে ছেলে সমীরকেও দেখেনি রামুয়া। সমীরও জানিয়েছে, তার যখন প্রায় ১০ বছর বয়স, তখন সে প্রথম বাবাকে দেখে।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রশান্ত দাবি করেছে, সে বিশালের সঙ্গে দমদমে শ্যামকে আনতে গেলেও সোদপুরে আসেনি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, টাটানগর থেকে আসা, শ্যামের বিমানের টিকিট ও বিমানবন্দর থেকে অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া সহ ফিরে যাওয়ার মতো সব ব্যবস্থা করেছিল প্রশান্তই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy