জন্মের পর থেকেই সে ভাবে বাড়ছিল না শিশুটি। প্রায় দেড় বছর বয়স হয়ে গেলেও ওজন ছিল মাত্র ছ’কেজি। খাবার খাওয়ার পরে মাঝেমধ্যেই সবুজ বমি করত ওই একরত্তি। অবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালে আনার পরে জানা গেল, শিশুটি খাদ্যনালির ‘ম্যালরোটেশন’-এ আক্রান্ত। অর্থাৎ, গর্ভস্থ অবস্থায় যে স্বাভাবিক নিয়মে তার খাদ্যনালির অবস্থান তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বরং তা ছিল উল্টো। যার ফলে খাদ্যনালি দিয়ে খাবার ঠিক মতো নীচের দিকে নামতে পারছিল না।
সম্প্রতি ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খাদ্যনালির বাধাপ্রাপ্ত অংশগুলিকে ঠিক করে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের বাসিন্দা তানিয়া সুলতানাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল। সেখানকার শিশু শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সুজয় পালের কথায়, ‘‘এমন সমস্যা খুবই বিরল। পাঁচশো থেকে ছ’হাজার শিশুর মধ্যে এক জনের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা পাওয়া যায়। ঠিক সময়ে রোগ চিহ্নিত ও উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে। অস্ত্রোপচারের পরেও শিশুটিকে কয়েক মাস পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।’’
সুজয়বাবু জানাচ্ছেন, মায়ের পেটে থাকাকালীন প্রথমে শিশুর খাদ্যনালি বাইরে থাকে।গর্ভাবস্থার তিন মাসে সেই খাদ্যনালি শিশুর পেটের ভিতরে ঢুকে যায়। সেই সময়ে একটি রক্তবাহী শিরাকে কেন্দ্র করে খাদ্যনালি পুরো ২৭০ ডিগ্রি ঘুরে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরার মতো করে) পেটের ভিতরে তার স্বাভাবিক অবস্থান তৈরি করে। তাতে অ্যাপেন্ডিক্স পেটের নীচে, অর্থাৎ তলপেটের ডান দিকে থাকে। কিন্তু তানিয়ার ক্ষেত্রে খাদ্যনালির ঘোরার প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়েছিল।যার জেরে অ্যাপেন্ডিক্স পেটের বাঁ দিকে, বুকের পাঁজরের নীচে ছিল। আর রক্তবাহী শিরার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় চেপে গিয়েছিল খাদ্যনালিও। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সুজয়বাবু, অরিন্দম ঘোষ, অনীক রায়চৌধুরী, সাবির আহমেদ এবং অ্যানাস্থেটিস্ট মোহনচন্দ্র মণ্ডলের দল জটিল অস্ত্রোপচারটি করে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এত ছোট শিশুর মাইক্রো-সার্জারি পদ্ধতিতে এ হেন অস্ত্রোপচার পিজিতে এই প্রথম।