ফাইল চিত্র।
চোখের ওয়ার্ডই এখন পরিণত হয়েছে ‘মিউকরমাইকোসিস ইউনিট’-এ।
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই এসেছে ছত্রাকঘটিত এই সংক্রমণ। দুই রোগের যৌথ হানায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য শিবিরও। আর তাই মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার জন্য ‘এপেক্স হাব’ বা উৎকর্ষ কেন্দ্র করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালকে। শেষ কয়েক দিন ধরে সেখানেই পুরোমাত্রায় শুরু হয়েছে মিউকরমাইকোসিসে
আক্রান্ত, অথচ কোভিড-নেগেটিভ রোগীদের চিকিৎসা। চক্ষু বিভাগের যেখানে ছানি অস্ত্রোপচারের পরে রোগীদের রাখা হত, সেখানেই তৈরি হয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক ওয়ার্ড। তবে রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রাখা হচ্ছে।
মিউকরমাইকোসিসের সমস্ত লক্ষণ রয়েছে, এমন আট জন রোগী এই মুহূর্তে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয়েছে ৭৮ বছরের এক বৃদ্ধের। তিনিও ওই রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে সন্দেহ। তবে
সকলের লালারসের কালচার রিপোর্ট না-আসা পর্যন্ত রোগটিকে নিশ্চিত ভাবে মিউকরমাইকোসিস বলতে চাইছে না স্বাস্থ্য শিবির। কিন্তু রিপোর্ট না-আসা পর্যন্ত কোথাও কোনও রোগীকে যাতে ফেলে রাখা না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে চাইছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ছত্রাকঘটিত এই রোগ সকলেরই হবে, এমনটা ভাবার যেমন কোনও কারণ নেই, তেমনই যাঁদের ন্যূনতম উপসর্গ দেখা দেবে, তাঁরাই অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিজি-তে পরবর্তী স্তরের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য পৌঁছবেন।’’
এই রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, কোভিড পরিস্থিতিতে তা সর্বত্র গড়ে তোলা কঠিন। তাই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজকে ‘সাব-হাব’ করার পাশাপাশি এসএসকেএমকে ‘এপেক্স হাব’ করা হয়েছে।
মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসায় সময় নষ্ট করা একেবারেই উচিত নয় বলে জানাচ্ছেন এসএসকেএমে ওই রোগের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক তথা নিউরোলজিস্ট বিমানকান্তি রায়। তাঁর কথায়, ‘‘এই কয়েক দিনে ওই রোগের লক্ষণযুক্ত যে ক’জন রোগীকে দেখেছি, প্রত্যেকেরই শরীরে ওই ছত্রাক অতি দ্রুত ছড়াচ্ছে, যা ক্যানসারের থেকেও ভয়ানক। এর ফলে সাইনাস, মুখের ছোট ছোট হাড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টিশক্তিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উচ্চমাত্রার বা অনিয়ন্ত্রিত সুগার থাকলে, করোনায় আক্রান্ত হলে কিংবা অন্যদের ক্ষেত্রেও নাক বন্ধ বা তা দিয়ে কালচে জল বেরোলে, চোখ লাল হয়ে ব্যথা হলে, চোখে ঝাপসা দেখলে, গলায় ঘা হয়ে কালচে
হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ
নিতে হবে। এই রোগের চিকিৎসায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যেমন, যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা। আবার সুগার-সহ অন্যান্য সমস্যা সারানো। সর্বশেষ বিষয় হল, অস্ত্রোপচার করতে হলে অতি দ্রুত করতে হবে। কারণ, নষ্ট হওয়া অংশগুলি বাদ দেওয়ার আগে পর্যন্ত ওষুধ ভাল মতো কাজ করবে না। অস্ত্রোপচারটি করতে চার-ছ’ঘণ্টা সময় লাগছে। তাই চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসা শুরু হলে অনেক সময়েই কোনও অংশ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।’’
মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য দফতর যে তিনটি বিষয়ে জোর দিচ্ছে, তার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তিনটি কমিটি গড়েছে এসএসকেএম। সুপার পীযূষ রায় জানান, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে আট জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি সামগ্রিক কমিটি তৈরি হয়েছে। ন’জন চিকিৎসককে নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’। রোগী ভর্তি হওয়ার পরে তাঁকে তৎক্ষণাৎ কী চিকিৎসা দিতে হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ওই কমিটি। প্রয়োজনে দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য গঠিত হয়েছে পাঁচ জন চিকিৎসকের আর একটি কমিটি। স্নায়ু, নাক-কান-গলা, চোখ, দাঁত, প্লাস্টিক সার্জারি, অ্যানাস্থেশিয়া, এন্ডোক্রিনোলজি, নেফ্রোলজি, মাইক্রোবায়োলজি-সহ আরও কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রয়েছেন ওই সব কমিটিতে। ওই তিনটি কমিটিই পিজি ও শম্ভুনাথে মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকছে। পাশাপাশি, এই রোগের বিষয়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশেরও পরিকল্পনা রয়েছে কমিটিগুলির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy