Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

‘ঝড় কেন জমল না, সব দোষ মিডিয়ার’

লোকে ভুলেই যাচ্ছে, জেলায় ইয়াসের অভিঘাত কম নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধে সংবাদমাধ্যমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

দানা বেঁধেও থিতিয়ে গেল ঝোড়ো উত্তেজনা! তা বলে চিবিয়ে চিবিয়ে শেক্সপিয়র আওড়ানোর এমন সুযোগ কি সহজে মেলে?

‘সাউন্ড অ্যান্ড ফিউরি, সিগনিফাইং নাথিং’! প্রতিনায়ক ম্যাকবেথের জীবন শেষের এই পরম উপলব্ধি সত্যিই খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে, প্রচারমাধ্যমের টানা কয়েক দিনের ‘শূন্যগর্ভ তর্জন-গর্জন’কে বিঁধতে। যত গর্জাল তত বর্ষাল না। পর্বতের মূষিক প্রসব। খিচুড়ি চাপাতে চাপাতে রোদ্দুর উঠে গেল! গাঁটের কড়ি গচ্চা দিয়ে ইনভার্টার, জেনারেটর সেটের ব্যবস্থা করে লাভটা কী হল? বন্ধুকে কারও সহৃদয় পরামর্শ, মোমবাতিগুলো রেখে দিস, রোম্যান্টিক ‘ক্যান্ডেললাইট ডিনারে’ কাজে লাগবে।

অতিমারির এই দুঃখদিনে খুচরো হাসিঠাট্টায় মনটা হাল্কা হয়। কিন্তু বুধবার সকালে সময়ের আগে ওড়িশায় ল্যান্ডফলের পরে ‘ইয়াস’ কলকাতায় তেমন থাবা না-মারায় মিডিয়ার উপরে ক্ষোভটাই গাঢ় হচ্ছে। ভাবখানা, ঝড় কেন জমল না, সব দোষ মিডিয়ার। সব টিআরপি-র খেলা, ক’টা দিন ভয়ের কারবারে ব্যবসা চালিয়ে গেল? আমপানের সঙ্গে তুলনায় ক’টা গাছ পড়েছে? ক’টা বাড়ি ভাঙল?

লোকে ভুলেই যাচ্ছে, জেলায় ইয়াসের অভিঘাত কম নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধে সংবাদমাধ্যমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “ঝড়ের সঙ্কেত থাকলে পুরসভা, সিইএসসি-সহ পুলিশ— সবাইকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। ঝড় বেশি না-হলেও এটা কর্তব্য। মিডিয়ারও সব আশঙ্কা তুলে ধরাই কর্তব্য। এটা ভয় দেখানো নয়। মানুষকে সতর্ক করা।”

সফোক্লিস থেকে মিল্টন, প্রাচীন ধ্রুপদী সাহিত্য বার বার দেখিয়েছে, জ্ঞানই দুঃখের কারণ। তবু সত্যকে খুঁড়ে বার করাই মানুষের ধর্ম। “বিজ্ঞান-প্রযুক্তির হাত ধরে সত্যকে জানতে গিয়ে উৎকণ্ঠাও বাড়ে। কোভিড হলে লোকে ভাইরাস কত দূর ক্ষতি করল বুঝতে রক্তপরীক্ষা বা ফুসফুসের স্ক্যান করাচ্ছেন। ঠিক তেমনই বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি বুঝে বা আবহবিদদের পূর্বাভাস শুনে সাবধান হতে হয়। একটু-আধটু বাড়াবাড়ি হলেও পরে আফশোস করার থেকে এটাই ভাল”, বলছিলেন শহরের এক প্রবীণ চিকিৎসক।

সুকুমার রায়ের গল্পে পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে বলে এক কাঁদোকাঁদো বালক মামার ঘুম ভাঙিয়েছিল। বাম আমলের গোড়ায় আংশিক সূর্যগ্রহণের অভিঘাত নিয়ে নানা জল্পনায় ছুটি ঘোষণা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অর্থনীতির প্রবীণ অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য হাসছেন, “যে যাই বলুন, পদে পদে অনিশ্চয়তা বোধের জীবন থেকে আজ আমরা অনেক এগিয়েছি। একশো ভাগ নিখুঁত ভাবে বলা না-গেলেও এ বারেও ঝড়ের গতিবিধি ঠিকঠাকই বলেছে সংবাদমাধ্যম। স্বস্তির বদলে মানুষের হতাশাই তাই বিচিত্র।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy