অসচেতন: ফের দ্রুত বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বসন্তোৎসবের উন্মাদনায় অবশ্য মানা হচ্ছে না কোনও বিধি। শনিবার, রবীন্দ্র সদনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মুখে নেই মাস্ক। সারা শরীরে রং মাখা। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, রং খেলার আনন্দে নিজের অসুস্থতার দিকে নজরই ছিল না। এপিলেপ্সি বা মৃগীর সমস্যায় ভোগা এমনই এক ব্যক্তিকে শনিবার সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আনা হয়েছিল এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে। তাঁকে দেখে বিরক্ত চিকিৎসকদের এক জন বললেন, “কোনও সচেতনতার বার্তাই এঁরা শোনেন না। দোলের ছুটির আগেই রং খেলতে নেমে পড়েছিলেন। অথচ, রঙে থাকা ধাতব পদার্থ ওঁর স্নায়ুর যত না ক্ষতি করেছে, তার চেয়েও দেদার নেশা করায় বেশি সমস্যা হয়েছে। মৃগীর ওষুধ কাজই করেনি।”
করোনা-কালের সতর্কতা মেনে দেদার রং খেলা এ বার বন্ধ না করলে এমনই নানা উপসর্গের বাড়বাড়ন্ত দেখা দিতে পারে বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা। সেই সঙ্গেই রয়েছে রং খেলার আনন্দে মেতে এক দিনেই হাজার হাজার লোকের সংক্রমিত হওয়ার ভয়। প্রতিষেধক নেওয়া থাকলেও যে ভয় কমবে না বলেই তাঁদের মত। আগে আক্রান্ত হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের এ বার বিপদ আরও বেশি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য জানিয়েছে, রং খেলতেই হলে মাস্ক পরা আবশ্যিক। তবে উৎসবমুখী জনতা তা কতটা মনে রাখবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
শুক্রবার প্রায় আট দফা নির্দেশিকায় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, কোভিড রুখতে ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। দোল উৎসব ঘিরে কোনও জমায়েত বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। রং খেলতে হলে তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সেই সময়েও মাস্ক পরে থাকতে হবে। তবে বয়স্ক, শিশু বা অন্তঃসত্ত্বাদের রং খেলা এড়িয়ে চলতেই হবে। ধর্মীয় স্থানগুলিকে ভিড় এড়ানোর নির্দেশ দেওয়া তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে রয়েছে সাবান-জল দিয়ে হাত ধোয়ার নির্দেশও।
যদিও এই নির্দেশিকা উড়িয়ে এ দিনই দেদার রং খেলার ছবি দেখা গিয়েছে ময়দানে। মাস্ক, দূরত্ব-বিধি পালন বা সাবান জলে হাত ধোয়া— কিছুরই বালাই ছিল না সেখানে। জমায়েতের আয়োজনেও না নেই শহরে। আয়োজকদের বেশির ভাগই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় ভাবে খবর। ভোট-বঙ্গে জনসংযোগ সারতে দলবল নিয়েই রং খেলতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তাঁরা। কোথাও রয়েছে ডিজে বাজিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা, কোথাও রঙের সঙ্গে দেদার খানাপিনার আয়োজনের ঘোষণা। ভোটপ্রার্থীদের কেউ আবার নিজের লেখা ভোটের গানে আনন্দ দেওয়ার কথাও বলে রেখেছেন। উত্তর কলকাতার এক দোল উৎসবের উদ্যোক্তার আবার মন্তব্য, “জাপটে ধরে রং মাখানোর
পুরনো মজা তো এ বার আরও বাড়বে। এক বছর ঘরবন্দি থাকার পরে মানুষের আবেগ লাগামছাড়া। তাই কোনও কিছুই যাতে হাতের বাইরে বেরিয়ে না যায়, তাই আমরাই দোল উৎসবের আয়োজন করছি।” রাসবিহারীর জমায়েতের এক উদ্যোক্তা আবার বলছেন, “ভোটের আগে দোল উৎসব বাড়তি পাওয়া। করোনা পরে ভাবা যাবে, কিন্তু এই দোলে জনসংযোগ যে করবে না, সে বোকা।”
যদিও চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, “আগে তো বেঁচে থাকি, তার পরে তো দোল খেলব! আমাদের বিপদ এখন সব চেয়ে বেশি— পশ্চিম ভারত থেকে করোনা আসছে আর পূর্ব ভারতে ভোটের তাণ্ডব হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি মাথায় রেখে জনস্বাস্থ্য কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, এটাই চাই।” চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “গত মার্চের এই সময়ের চেয়ে এ বার সংক্রমণের হার অনেক বেশি। মনে রাখতে হবে, এ বার রং খেলা মানে প্রাণ নিয়ে খেলা।”
চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় আবার বললেন, “ভাইরাস প্যাটার্ন এত বদলাচ্ছে যে, কোন ছকে ফেলে চিকিৎসা চলতে পারে, তা বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তা হলে কিসের জোরে বুক চিতিয়ে রং খেলতে নামছি আমরা?” তাঁর পরামর্শ, “রং খেলা বন্ধ তো করতে হবেই, সেই সঙ্গে একই দিনে দেদার নেশাও নিষিদ্ধ করতে হবে। এই সময়ে নিজ উদ্যোগে স্নায়ুকে দুর্বল করলে কিন্তু বিপদ।” অন্তঃসত্ত্বাদের সতর্ক করে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ, “শারীরিক কারণেই অন্তঃসত্ত্বাদের মাস্ক পরে থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়। দ্রুত হাঁপিয়ে যান তাঁরা। তার মধ্যে রং খেলতে নামলে বিপদ অবধারিত। নিজেকে বলতে হবে, দু’দিন বাদে যে আসছে, তার জন্য বাইরের পরিবেশ এমনিতেই এখন অনুকূল নয়। মা হয়ে সেটা কেন আরও প্রতিকূল করব?”
এই সব পরামর্শ মেনে কি আদৌ সতর্ক হবে শহর? রং-ছবির চিত্র স্পষ্ট হবে আগামী ২৪ ঘণ্টাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy