পুরসভার গাড়ি ও কেনা জলেই ভরসা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পুরবাসীর থেকে পানীয় জলের কর আদায়ে কলকাতা পুরসভার অনীহার কথা অজানা নয়। কিন্তু এ জন্যে জনগণের উপরে টাকার বোঝা না চাপানোর যে যুক্তি দেখায় পুর প্রশাসন, সে ব্যাপারে তারা আদৌ কতটা চিন্তিত, সেটাই অজানা কলকাতা পুরসভার ১১১-১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বড় অংশের। ওই চার ওয়ার্ডের জলাভাবের ছবি দেখে অভ্যস্ত বাসিন্দারা অন্তত তেমনই মনে করেন। শীতেও এখানে জলকষ্ট মেটাতে কুড়ি লিটার পানীয় জল তিরিশ টাকা দিয়ে কিনতে হয়! পুরনো এই ছবি বদলে ফাঁকা পুর আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলে না বলে দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই।
পুরসভা সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার ১১১-১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব থাকলেও সমস্যা বেশি ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশদ্রোণীর সোনালি পার্ক, পালপাড়া, পূর্ব আনন্দপল্লি এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে সোনালি পার্কের বাসিন্দা সরকারি কর্মী সৈকত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এমনই পরিস্থিতি টাকা দিয়ে পানীয় জল কিনে খেতে হয়। এখানে মিষ্টি বা মুদির দোকানেও বিক্রি হয় জলের জেরিক্যান। প্রতি কুড়ি লিটার জলের দাম তিরিশ টাকা। কারণ, পুরসভা যে পানীয় জল সরবরাহ করে সেটিতে বেশির ভাগ সময়ে কাদা-নোংরা থাকে।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জল যথাযথ পরিস্রুত না হওয়ায় ফিল্টারের যন্ত্রে ময়লা জমে অচল হয়ে যায়। দৈনন্দিন ব্যবহারের এত জল কেনা সম্ভব নয়, তাই বাধ্য হয়ে কাদা মেশানো জলেই স্নান করতে হয়।
সোনালি পার্কের অন্য বাসিন্দা মধুময় ঘোষের কথায়, ‘‘কাছের এলাকা কংগ্রেস নগরে রোজ সকালে পুরসভার পানীয় জলের গাড়ি আসে। কিন্তু জল নিতে সেখানে এতই দীর্ঘ লাইন পড়ে যে ওখান থেকে জল আনা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর গোপাল রায় পরিস্রুত পানীয় জলের সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ক্রমবর্ধমান বসতির তুলনায় গার্ডেনরিচ প্রকল্পের জল পর্যাপ্ত নয়। সেটাই সব থেকে বড় সমস্যার।’’
কমবেশি একই রকম সমস্যা রয়েছে পাশ্ববর্তী ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুর, ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুঁটিয়ারি, গঙ্গাপুরি এলাকাতেও। ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের সুবোধ পার্ক, নস্করপাড়া, মধ্যপাড়া সারদামণি পার্ক, বন্দে আলি পল্লি, সেন্ট্রাল পার্ক, জনতা কলোনি, এক নম্বর কংগ্রেস কলোনি, নবপল্লি, বৈশালী পার্ক, নাথপাড়া, টেগোর গার্ডেন প্রভৃতি এলাকায় পরিস্রুত জলের অভাবে নাকাল হচ্ছেন স্থানীয়েরা। নবপল্লির কয়েক জন বাসিন্দা জানালেন, মাসকাবারি জিনিসের মতোই জলের খরচ মাসের ফর্দে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। ১১২ ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের আশ্বাস, ‘‘গার্ডেনরিচ প্রকল্প থেকে বাড়িগুলিতে জল সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে। আগামী বছরের মধ্যে সমস্যা মিটবে বলে আশা করছি।’’
সমস্যার কথা মানছেন টালিগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘চারটি ওয়ার্ডে গার্ডেনরিচ প্রকল্প থেকে পরিস্রুত জল মজুত করতে আরও দু’টি রিজার্ভার করা হচ্ছে। এক বছরের মধ্যে সেই কাজ শেষ হলে চারটি ওয়ার্ডে জলের সমস্যা মিটবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy