সুরক্ষা: ঠান্ডা হাওয়া থেকে বাঁচতে টুপি পরে নিচ্ছেন এক তরুণী ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
এ যেন টান টান টি-২০ ম্যাচ! নভেম্বর-ডিসেম্বরকে যদি ‘পাওয়ার প্লে’-র প্রথম কয়েক ওভার ধরা হয়, তা হলে জানুয়ারির এই সময়টাঅবশ্যই মাঝখানের ওভারগুলো। প্রথম দিকে ঠান্ডার ব্যাটে বিশেষ রান তো ওঠেইনি, উল্টে ভাল রকমহতাশ হতে হয়েছে। কিন্তু সেই সব যেন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে পুষিয়েদেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এখন। শুধু বড় রানই উঠছে না, ঠান্ডার দাপটে নতুন নতুন রেকর্ডও হচ্ছে। পরক্ষণেই আলোচনা শুরু হচ্ছে, এই রেকর্ড কাল অক্ষত থাকবে তো?
প্রথমে চলতি মরসুমের শীতলতম দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর। সে দিন তাপমাত্রা ছিল ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার পর থেকে সেভাবে ঠান্ডা না পড়ায়, বিশেষত বছরের শেষ কয়েকটি দিন গরম অনুভূত হওয়ায় অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘এ শহরে শীত আসে না। যা আসে, তাকে বড়জোর শিরশিরানি বলা যায়। এ বার সেটাও নেই।’’ অনেকে আবার বলেন, ‘‘আসছে বছর আবার হবে। শীত নয়, শীত-শীত ভাব হবে!’’ কিন্তু নতুন বছরে চলতি সপ্তাহেরশুরু থেকেই বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার তৈরি হয় নতুনরেকর্ড। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে যায় ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, এটিই এই মরসুমের শীতলতম দিন। শুক্রবার ভেঙে গেল সেই রেকর্ডও। যখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছুঁল ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।
এমন পারদ পতন শোনামাত্র খোঁজ শুরু হয়, শেষ কবে কলকাতায় এত ঠান্ডা পড়েছে? দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে রেকর্ড। গত পাঁচ বছরে শহরে কখনওই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে নামেনি। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি শেষ বার তাপমাত্রা নেমেছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমনিতে জানুয়ারির এই সময়ে তাপমাত্রা মোটামুটি ভাবে ১১ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করে। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি তাপমাত্রা নেমেছিল ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০২১ সালে তাপমাত্রা ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে ২০ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাপমাত্রা হয় ১১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি রেকর্ড তৈরি করে হয়েছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের বছর তাপমাত্রা ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি নামেনি। সেটি হয়েছিল ওই বছরের ১৫ জানুয়ারি। ২০১৬, ২০১৫ এবং ২০১৪ সালে তাপমাত্রা হয়েছিল যথাক্রমে ১১.৩, ১১.৪, ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাপমাত্রা নেমেছিল ৯ ডিগ্রিতে। গত দশ বছরে সেটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।
কিন্তু এ বার পরিস্থিতির এমন হঠাৎ বদল হওয়ার কারণ কী? আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হাওয়া আর তার সঙ্গী ঘন কুয়াশার জন্য ঠান্ডা মালুম হয়েছে ভাল রকম। এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য চলছে তাপমাত্রার খামখেয়ালিপনা। দুইয়ে মিলে রীতিমতো হাঁড় কেপে গিয়েছে দুপুরের পর থেকে। আজ, শনিবার এই রেকর্ডও ভেঙে যেতে পারে। আরও নামতে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে আবহাওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, রবিবার কিছুটা তাপমাত্রা বাড়ার ব্যাপার থাকলেও ফের তা কমবে। তবে সেই সময়ে এই নতুন রেকর্ডও ভেঙে যাবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করছেন না তাঁরা।
তবে কী হবে অথবা কী হতে পারে, এই আলোচনায় এখন মন দিতে নারাজ শহরবাসী। আবহাওয়ার মতিগতি বুঝে অনেকেই এ দিন তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ভিড় টেনেছে ময়দান এবং চিড়িয়াখানা। সমানে টক্কর দিয়েছে ইকো পার্ক, নিক্কো পার্কের মতো একাধিক বিনোদন-স্থল। এমনই ভিড়ের মধ্যে থেকে একমাঝবয়সি বললেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কলকাতায় বরফ পড়ার ছবি ঘুরছে। বরফ না পড়ুক, আনন্দ করতে বেরিয়ে পড়ার জন্য এই ঠান্ডাই বাকম কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy