বিকল্প: এই অস্থায়ী শিবিরেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেতুর নীচে থাকা বাসিন্দাদের। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
সেতুর অবস্থা বিপজ্জনক। তাই তার নীচের ‘দখলদারদের’ যেতে হবে অস্থায়ী শিবিরে। কিন্তু ওই বাসিন্দাদের অনেকেরই তো বাসস্থানের প্রমাণপত্র হিসেবে রয়েছে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র। তা ছাড়াও অন্যান্য একাধিক পরিচয়পত্রও রয়েছে তাঁদের। নির্বাচন কমিশনও তাঁদের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রকে বৈধতা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিপজ্জনক টালা সেতুর নীচে বাসিন্দাদের ‘দখলদার’ বলেই দাবি করেছে প্রশাসন। তাঁদের সেখান থেকে সরাতে চাওয়ায় তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, বৈধ ভোটার পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের ‘দখলদার’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে?
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, ‘‘যাঁদের বাড়িতে ওঁরা কাজ করেন, তাঁরাই অনেকে নিজেদের ঠিকানা দিয়ে ওঁদের ভোটার কার্ড বানিয়ে দিয়েছেন।’’ আর সেতুর নীচের বাসিন্দা, ঘুপচি ঘরের মালিক রাজা হাজরার দাবি, ‘‘কোনও প্রমাণপত্র না থাকলে সন্তানদের পড়াশোনা, চাকরি সবেতেই অসুবিধা হত। বাবুরা দয়া করে তাঁদের ঠিকানা দিয়ে আমাদের ভোটার কার্ড তৈরি করতে দিয়েছিলেন। সেতুর তলায় আমরা বহু বছর ধরে রয়েছি।’’
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, ‘অর্ডিনারি রেসিডেন্ট’ হিসেবে এমন ভোটার কার্ড হয়। ওই ভোটার কার্ড পেতে তাঁরা নিশ্চয়ই কোনও প্রমাণপত্র দেখিয়েছেন। বুথ স্তরের অফিসার ফুটপাতবাসীদের থাকার জায়গা যাচাই করে নিলে তাঁরাও নিয়ম মতো ভোটার কার্ড পেতে পারেন।
সরানো হচ্ছে জিনিসপত্র। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ফলে রুগ্ণ টালা সেতু অনিশ্চয়তা এনে দিয়েছে রাজার মতো প্রায় ৫০০ বাসিন্দার জীবনে। পুরসভা তাঁদের জন্য অস্থায়ী শিবির তৈরি করছে ঢিল ছোড়া দূরত্বের রায়বাগানে। বুধবার রাতেই জেসিবি দিয়ে রাস্তার ঝোপজঙ্গল কেটেছে পুরসভা। কাঁচা রাস্তায় লম্বা ইটের চাতালের উপরে বাঁশের চালায় চেপেছে ত্রাণ দফতরের ত্রিপল। কিন্তু সেখানে যেতে নারাজ নিতাই পাত্র, সুনন্দা পাত্রেরা। তাঁদের দাবি, ‘‘শিবিরের সামনে কাঁচা নর্দমা। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল জমে। ঘরের এত জিনিসপত্র নিয়ে কি ওই শিবিরে থাকা যায়? আর কয়েক দিন পরেই তো আরপিএফ এসে পিটিয়ে তুলে দেবে। তা ছাড়া শুনছি, সেতু সারাই হওয়ার পরেও আর আমাদের নীচে থাকতে দেবে না।’’
অনুমতি ছাড়াই পুরসভা শিবির তৈরি করছে বলে দাবি করে বৃহস্পতিবার সকালে কিছু ক্ষণের জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় আরপিএফ। যদিও পুরসভার আধিকারিকেরা দাবি করেন, রেলের সঙ্গে কথা বলেই কাজ হচ্ছে। পরে রায়বাগানে এসে তরুণবাবু বলেন, ‘‘নবান্নের বৈঠকে শিয়ালদহের ডিআরএম-ও ছিলেন। শিবির তৈরির বিষয়ে ওঁকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। আর ওই রাস্তার পুরোটা রেলের জমি নয়। এখন অস্থায়ী হলেও পরে পাকাপাকি ছাউনি বানিয়ে দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও জানান, শিবিরের সামনের নর্দমাটি সাফ করে বাঁধিয়ে দেওয়া হবে। সেতুটির গার্ডারের নীচের অংশ বেশি বিপজ্জনক, তাই আগে সেখানকার ঘরগুলি খালি করা হচ্ছে।
এ দিন দুপুরেই সেতুর দু’পাশের ফুটপাতের পেভার ব্লক তুলে ফেলা হয়। তরুণবাবু বলেন, ‘‘বালি দিয়ে ওই ব্লকগুলি বসানো হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির জল ঢুকে বালির ওজন বেড়ে গিয়েছে। তাই ভার কমাতে পেভার ব্লক তুলে বালি বার করা হবে।’’ তবে ঘুপচি ঘরের দোতলায় উঠতেই দেখা গেল, সেতুর নীচের বেশ কিছু অংশে মেরামতি হলেও রেললাইনের উপরে সেতুর বিভিন্ন জায়গায় জন্মেছে গাছ, জমছে জলও।
সেতুর নীচে ঘুপচি ঘরেই থাকেন মনসা দাস। দুপুরে বিভিন্ন জিনিস পুঁটলি বেঁধে একটি ভ্যানে তোলার ফাঁকেই বললেন, ‘‘জানি না, এর পরে কী হতে চলেছে। তাই সব জিনিস কাজের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’
আর সেতুর নীচে এক কোণে শুয়ে থাকা ৯০ বছরের সুভাষী মণ্ডল বললেন, ‘‘আগে কাঠের সেতু ছিল। একটি দোতলা বাস ভেঙে পড়ার পরে সেতুটি পাকা হয়েছিল। ভেবেছিলাম, মাথার উপরের ছাদটা পাকা হল। আবার সেটাও চলে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy