‘আপনার সই মেলেনি। তাই ঋণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যায়নি। দয়া করে ব্যাঙ্কের শাখায় এসে যোগাযোগ করুন।’— একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এমন চিঠি পেয়ে চমকে উঠেছিলেন মধ্য কলকাতার সার্পেন্টাইন লেনের বাসিন্দা বিমল সেন। কোনও ঋণের জন্য তিনি আবেদনই করেননি!
লালবাজারে বিষয়টি পৌঁছনোর পরে জানা যায়, সম্প্রতি বিমলবাবু এবং তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী করোনার প্রতিষেধক নেবেন বলে অনলাইনে পাওয়া একটি ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেছিলেন। সেই সূত্রেই ‘ভেরিফিকেশন’-এর নামে এক ব্যক্তি বছর ৬৮-র বিমলবাবুর বাড়ি যান। কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে সেগুলির প্রতিলিপিতে সই করান দম্পতিকে দিয়ে। বাড়ির একটি ছবিও নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। বিমলবাবুদের জানানো হয়, প্রতিষেধক নেওয়ার এমন নিয়মই করা হয়েছে সরকার থেকে!
পুলিশি হস্তক্ষেপে ওই দম্পতি শেষমেশ রক্ষা পেলেও প্রতিষেধক দেওয়ার নামে প্রতারণার এমনই বহু অভিযোগ গত কয়েক মাসে সামনে আসছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রতিষেধক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। সেই সুযোগেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতিষেধক-প্রতারণার নানা চক্র। লালবাজার সূত্রের খবর, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইনে পাওয়া নম্বরে কথা বলে প্রতিষেধকের স্লট ‘বুক’ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। আগাম টাকা জমা নেওয়ার নামে দু’হাজার, তিন হাজার টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। লিঙ্ক পাঠিয়ে স্লট ‘বুক’ করানোর নামে আবার কারও অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে পনেরো-কুড়ি হাজার বা তারও বেশি টাকা!
বেহালার বাসিন্দা শ্রীরাধা ঘোষ নামে এক মহিলার অভিযোগ, প্রতিষেধকের জন্য নাম নথিভুক্ত করাতে তিনি একটি মেসেজ পেয়েছিলেন মোবাইলে। মেসেজে ক্লিক করতেই একটি পোর্টাল খুলে যায়। যা দেখতে অনেকটাই কো-উইন পোর্টালের মতো। এর পরে তাঁর মোবাইল ফোন আর তাঁর দখলে ছিল না। এমনই মেসেজ পেয়ে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বেলেঘাটার তন্ময় সাধুখাঁ, বাঁশদ্রোণীর নীলাম্বর সাহার মতো অনেকে। সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ভুয়ো ওই মেসেজে ক্লিক করলেই একটি ক্ষতিকারক অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড হয়ে যায়। খুলে যায় কো-উইন পোর্টালের মতো দেখতে একটি পোর্টাল। এর পরে মোবাইল ফোনটিই প্রতারকদের দ্বারা চালিত হতে শুরু করে। সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ইএসইটি-র গবেষক লুকাস স্টেফানকো দিন কয়েক টুইট করে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। মূলত ভারতের মতো যে সব দেশে প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিষেধক কম রয়েছে, সেখানেই ওই ভুয়ো মেসেজ ছড়ানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
হাজরার বাসিন্দা কুমারেশ বসু নামে এক ব্যক্তি আবার প্রতারিত হয়েছেন ই-মেলের ফাঁদে পড়ে। নামী বেসরকারি হাসপাতালের নামে আসা মেলে দাবি করা হয়, তাদের প্রতিষেধক ক্যাম্পে নাম নথিভুক্ত করতে জন প্রতি আড়াই হাজার টাকা করে আগাম দিতে হবে। হাসপাতালের লোক আবেদনকারীর সুবিধা মতো জায়গায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসবেন, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ছ’জনের জন্য মোট ১৫ হাজার টাকা কুমারেশবাবুর বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসেন ‘হাসপাতালের লোক’। নির্দিষ্ট দিনে হাসপাতালে গিয়ে ওই ব্যক্তি জানতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা তথা সাইবার গবেষক সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, “একটু সতর্ক হলেই এ জিনিস এড়ানো সম্ভব। মোবাইলে পাওয়া মেসেজ বা অনলাইনে পাওয়া কোনও নম্বরকেই বিশ্বাস করা চলবে না। অপরিচিতের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করতে হবে।” লালবাজারের সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী আধিকারিক বললেন, “নিজেরা নিশ্চিত হতে না পারলে পুলিশের সাহায্য নিন। তা হলেই প্রতারণা বন্ধ করা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy