বৃষ্টি-মিছিলে নাকাল কলকাতা। যানযটে থমকে শহর। ছবি: সুমন বল্লভ।
বিকেল সওয়া ৩টে। মানিকতলা থেকে শিয়ালদহ স্টেশন- এই মিনিট পনেরোর পথ যেতে সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা। সৌজন্যে শহর জুড়ে তিন-তিনটি সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল।
রাত ৯টা। চাঁদনি চক থেকে রবীন্দ্র সরণি হয়ে বড়বাজার যেতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। সৌজন্যে বিকেলের ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টি।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত এ ভাবেই বিক্ষোভ মিছিল ও বৃষ্টির জেরে যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। রাতে জল জমে যান-চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায় সল্টলেকের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতেও।
দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করে তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে— এই অভিযোগে এ দিন শহরের বিভিন্ন মোড়ে চাক্কা-জ্যামের কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস। পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল ১১টা নাগাদ বিডন স্ট্রিট-যতীন্দ্র মোহন অ্যাভিনিউ মোড়, মহাত্মা গাঁধী রোড-বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট মোড়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-গিরিশ পার্ক মোড়, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, ডোভার লেন–সহ পাঁচ-ছ’টি জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে কংগ্রেস। তবে কোনও জায়গাতেই ১০-১৫ মিনিটের বেশি অবরোধ স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এর জেরেই যানজট শুরু হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন অফিস যাত্রীরাও।
পুলিশ জানায়, এর পরেই বিকেল ৩টে নাগাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার জেরে শিক্ষক এবং ছাত্র সংগঠনের দু’টি মিছিল হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার নেতৃত্বে একটি মিছিল রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত আসে। আবার একই সময়ে এসএফআই-সহ বাম ছাত্র সংগঠনের একটি মিছিল আসে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত। ওই সময়েই এনআরএসে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র একটি মিছিল বেরোয়। ওই মিছিলটিও শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত আসে। পরপর তিনটি মিছিলের জেরে বিপর্যস্ত হয়ে যায় শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র বসু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের যান-চলাচল। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, অফিসযাত্রীদের পাশাপাশি প্রাথমিকে টেটের ফর্ম তোলার জন্য বহু চাকরিপ্রার্থীকেও প্রবল যানজটে পড়তে হয়।
এই বিপর্যয়ের জের কাটতে না কাটতেই সন্ধ্যায় শুরু হয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টির জেরে উত্তর কলকাতার বিধান সরণি, ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, বাইপাস-সহ ট্যাংরা, তিলজলা এলাকা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-মহাত্মা গাঁধী রোড মোড়, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে যায়। জল জমে যায় দক্ষিণ কলকাতারও বেশ কিছু অংশে। পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রের খবর, এ দিন দক্ষিণের চেয়ে উত্তর কলকাতায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির জেরে জল জমে ফের বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যান-চলাচল। রাত পর্যন্ত এই জল না নামায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় সার-সার গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। হাওড়া স্টেশনে যাওয়ার পথে ঘণ্টাখানেক ধরে স্ট্র্যান্ড রোডে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেন ধরতে পারেননি বহু দূরপাল্লার যাত্রী। পুলিশ সূত্রের খবর, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় মাঝরাত গড়িয়ে যায়।
এ দিন বৃষ্টির সময়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে বেলুড়ে জঙ্গি সিংহ গলিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন দক্ষিণ বাকসাড়ার বাসিন্দা দয়া মার্টিন। জখম দু’জন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ট্যাংরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন চন্দন মাইতি নামে বছর বিশেকের এক তরুণ। পুলিশ জানায়, বিদ্যুতের খুঁটিতে এক জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি প্রাণ হারান। বড়বাজার এলাকায় নন্দরাম মার্কেটের পাশে বাঁশের কাঠামো ভেঙে কয়েকটি দোকানের উপরে পড়ে। এক জন জখম হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy