প্রকাশ্যে: বাজি বাজার ছাড়াও শহরের অন্যত্র বিক্রি হচ্ছে বাজি। শনিবার, চাঁদনি চকে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
শব্দতাণ্ডব নিয়ে সারা শহরের যত মাথাব্যথাই থাক না কেন, শহরের অধিকাংশ কাউন্সিলর মনে করেন, শব্দবাজির দাপট আগের থেকে অনেক কমেছে! এ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন যা করছে, সেটাই যথেষ্ট। মানুষ ‘একটু আধটু’ উৎসব করবেন তাই সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ তাঁরা! সে শব্দবাজির ফলে বাসিন্দাদের জীবন যতই অতিষ্ঠ হোক।
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যেমন বলেছে যে, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে পুলিশ, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ সকলকেই সচেতন হতে হবে। সে ভাবে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরেরাও ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি যান। কিন্তু শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেন কাউন্সিলর বা বরো চেয়ারম্যানদের তেমন ভূমিকা থাকে না? কেন তাঁরা বাড়িতে গিয়ে শব্দবাজি সম্পর্কে সচেতন করেন না? এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারের জন্য এলাকার বাড়িগুলিতে যেতে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেন খোদ পুর কর্তৃপক্ষ। সেই মতো কাউন্সিলেরা প্রচার করায় কিছুটা হলেও ফল মেলে। অথচ শব্দতাণ্ডব সামাজিক সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও জনপ্রতিনিধিদের কোনও ভূমিকাই দেখা যায় না!’’ আর এক পরিবেশকর্মী বলেন, ‘‘ডেঙ্গির ক্ষেত্রে বলা হয়, কোন এলাকায় জঞ্জাল বা জমা জল জমে রয়েছে, সেটা স্থানীয় কাউন্সিলরেরাই ভাল জানেন। শব্দদূষণের ক্ষেত্রেও তো তা প্রযোজ্য। এলাকার কোথায় বেশি বাজি ফাটছে বা কোন আবাসন এলাকা শব্দপ্রবণ, সেটা স্থানীয় কাউন্সিলরেরই ভাল জানার কথা। কিন্তু সে ব্যাপারে তাঁদের কোনও ভূমিকা দেখা যায় না।’’
পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, উত্তর কলকাতার আটটি থানা এলাকা ও দক্ষিণ কলকাতার ১৪টি থানা এলাকায় শব্দবাজির উপদ্রব সবথেকে বেশি। তার মধ্যে মানিকতলা, বড়বাজার, বড়তলা-সহ একাধিক থানা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে কসবা, গড়ফা, রবীন্দ্র সরোবর, বেহালা-সহ থানা। পরিবেশকর্মীদের দাবি, সেখানকার কাউন্সিলর বা বরো চেয়ারম্যানদের সে অর্থে কোনও ভূমিকা দেখা যায় না।
কিন্তু কেন?
এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘বাজি ফাটানো তো উৎসব, ও সবে আমরা মাথা ঘামাই না!’’ কিন্তু সে উৎসব তো অত্যাচারের পর্যায়ে চলে যায়। তখন? সে প্রসঙ্গে সুশান্তবাবুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আগের থেকে শব্দবাজির উৎপাত অনেকটাই কমেছে!’’ শব্দবাজি ফাটানোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গড়ফা এলাকা। সংশ্লিষ্ট এলাকার বরো চেয়ারম্যান সুশান্তকুমার ঘোষের আবার বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি লড়াইয়ে একটা পরিকাঠামো রয়েছে। তাই বাড়ি বাড়ি যাওয়া সম্ভব। কিন্তু শব্দবাজি রোধে ব্যক্তিগত প্রচার চালিয়ে কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না!’’
আট নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সন্দীপরঞ্জন বক্সী মনে করেন, গত চার-পাঁচ বছরে শব্দবাজির দাপট অনেকটাই কমেছে! তাঁর কথায়, ‘‘দু’-একটি বিক্ষিপ্ত জায়গা বাদ দিলে বেশির ভাগ জায়গায় শব্দবাজির দাপট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ যদিও পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের মত, ‘‘কোথাও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিস প্রশাসনের একাংশের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্য শব্দতাণ্ডব ঠেকানো যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না।’’ এই পরিস্থিতিতে কসবা এলাকায় শব্দবাজির দাপট রুখতে মাইকে প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায়। বিজনবাবু বলেন, ‘‘আগামী শুক্র-শনিবার দু’দিন শব্দবাজির দূষণ কমানো নিয়ে প্রচার চালাব বলে ঠিক করেছি। না হলে এটা আটকানো যাবে না।’’
কসবায় এর ফল কতটা মিলবে? শহরের অন্য এলাকাগুলিও আদৌ কোনও সচেতনতার পরিচয় দেবে কি না, তার উত্তর মিলবে আগামী রবি ও সোমবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy