বিধি উড়িয়ে: রেড জ়োন বেলগাছিয়ায় চলছে আড্ডা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইকের পথ আটকেছিলেন রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। পুলিশের চোখে চোখ রেখে বাইকচালক জবাব দিয়েছিলেন, “মদ কিনতে যাচ্ছি।” তার পরে আর কিছু করার ছিল না ওই পুলিশকর্মীর। এর পরে অন্তত ৫০টি বাইককে আটকে একই উত্তর শুনতে হয়েছে তাঁকে। বৃহস্পতিবার, বাগুইআটি জোড়ামন্দিরের ঘটনা। শুক্রবার দুপুরে নাগেরবাজার সংলগ্ন সাতগাছি মোড়ে একটি গাড়ি আটকাতেই চালক জানিয়েছেন, জরুরি কেনাকাটা করতে পোশাকের দোকানে যাবেন তিনি। গাড়িতে সঙ্গে দুই মহিলাও ছিলেন।
পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিনে রাস্তায় নামা মানুষের হাবভাব, আচরণ বদলে গিয়েছে। সরকারি নির্দেশে দোকান খোলায় ক্রেতাদের ঠেকানোর কোনও আইন নেই। আবার দীর্ঘদিন এ ভাবে মানুষ বাড়িতে বসে থাকলে বেকারত্বও বাড়বে। সেই জন্য নজরদারির পাশাপাশি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এ বার জনগণকে সচেতন করার বিভিন্ন উপায় ভাবছে। সম্প্রতি এক দিনেই পুলিশ ৩০টির বেশি টোটো ও রিকশা বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪০ জনকে। পুলিশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছে, সরকারি নির্দেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’ আর ‘মার্কেট’ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে পুলিশেরও। ফলে কোন দোকান খোলা রাখতে দেওয়া হবে আর কোনটি বন্ধ রাখতে বলা হবে, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন পুলিশকর্মীরাই।
দমদম, বাগুইআটি, দমদম পার্ক, লেক টাউন, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বেলগাছিয়া, বহু জায়গাতেই দেখা গিয়েছে এলাকার প্রায় সব দোকান খোলা। সর্বত্র ভিড়ের ছবি দেখে মনে হয়েছে যেন লকডাউন উঠে গিয়েছে। মানুষ দূরত্ববিধিও বজায় রাখছেন না। সম্প্রতি দমদম, নাগেরবাজার এলাকা ঘুরে দেখেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা নিজে। শুক্রবারও এলাকার বেশির ভাগ দোকান খোলা ছিল। প্রায় সব দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। মুদিখানার পাশাপাশি অন্য দোকানও খুলতে দেখা গিয়েছে কেষ্টপুর মিশন বাজারে। বাজারের বাইরেও গায়ে গায়ে লাগানো একাধিক দোকানও এ দিন খুলেছে। তবে বিধাননগর কমিশনারেটের তরফে এ নিয়ে কোনও বক্তব্য মেলেনি।
আরও পড়ুন: কাজ বন্ধ, হাতে টাকা নেই, অগত্যা রেললাইনে ওঁরা
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বলেন, “সরকারি নির্দেশে দোকান খুলেছে। ফলে আমাদের ভিড় নিয়ন্ত্রণের অন্য কৌশল নিতে হবে। মানুষ যাতে দূরত্ববিধি মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। দোকানে ক্রেতা আসতেই পারেন। কিন্তু নিয়ম না মানলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ করবে। এই কারণেই ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাস্তায় টোটো-রিকশার অনুমতি এখনও নেই। ফলে তা রাস্তায় নামলে চালক এবং যাত্রী দু’জনকেই পুলিশ আটক করবে। কয়েকটি জায়গায় ভিড় হচ্ছে বলে এ দিন খবর পেয়েছি। শুক্রবার সেখানে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপও করা হয়।”
আরও পড়ুন: সদ্য খোলা অফিসে, দোকানে নজরদারি পুলিশের
পুলিশ সচেতন করতে চাইলেও মানুষের হুঁশ ফেরার লক্ষণ শুক্রবারেও দেখা যায়নি। কেষ্টপুর, বাগুইআটি, নাগেরবাজার মোড়ে ভিড় করে ঠান্ডা পানীয় খেতে করতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের। চায়ের দোকানেও ফিরছে পুরনো আড্ডা। কেষ্টপুরের বাসিন্দা সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বইয়ের দোকানে গিয়েছিলাম পেন কিনতে। সেখানেও কেউ দূরত্ব মানছেন না। সামনেই চায়ের দোকানেও যথেষ্ট ভিড়। এক যুবককে এ কথা বলায় তিনি পাল্টা জানতে চাইলেন, তিনি চা খাবেন কোথায়। বাড়ি নিয়ে গিয়ে?” পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ক্রেতারা যাতে দূরত্ববিধি মেনে চলেন, সেটা ব্যবসায়ীদের দেখতে হবে। তা ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy