Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Autistic Child

অটিস্টিক শিশুর নিগ্রহে বাতিল হোক অভিযুক্তের রেজিস্ট্রেশন, দাবি শহরে

বেলেঘাটার ওই সেন্টারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। এই ঘটনার এফআইআরে ‘রাইট টু ডিজ়এবিলিটি অ্যাক্ট’-এর ধারাও যুক্ত করা হতে পারে বলে খবর।

autistic child

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ০৬:০১
Share: Save:

মারধর তো দূর, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কোনও শিশুকে দিয়ে জোর করেও কিছু করানো যায় না। যা করাতে হবে, সবটাই ভালবেসে, খেলার ছলে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেমন তাদের কোলে নেওয়া যায় না, তেমনই তারা কোনও কিছু করতে অস্বীকার করলে গায়ে হাত তোলাও গুরুতর অপরাধ। আইনি শাস্তির পাশাপাশি অভিযুক্তের রেজিস্ট্রেশনও বাতিল হওয়া উচিত। বেলেঘাটার একটি কেন্দ্রে স্পিচ থেরাপির ক্লাসে সাত বছরের অটিস্টিক শিশুকে মারধরের অভিযোগ সামনে আসার পরে এমনই দাবি তুলেছেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের অভিভাবক এবং এই কাজে যুক্তেরা।

‘অটিজ়ম সোসাইটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর ডিরেক্টর ইন্দ্রাণী বসু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ঠিকঠাক বিকাশের লক্ষ্যেই ওদের জন্য স্কুল বা সেন্টার তৈরি হয়। স্পিচ থেরাপির ক্লাসে তাদের ভাব-বিনিময় বা কথাবার্তা বলায় উৎসাহ দেওয়া হয়। সেখানেই এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ক্লাসঘরের ভিতরে নির্যাতন যাতে আর না ঘটে, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন।’’ স্পেশ্যাল এডুকেটর চন্দ্রাণী চক্রবর্তী জানান, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে এই ধরনের বিশেষ বিষয়ে পড়াশোনা করার পরে ‘রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’য় (আরসিআই) রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। সেখান থেকে পাওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ভিত্তিতে এর পরে কাজ শুরু করেন এক জন স্পেশ্যাল এডুকেটর বা স্পিচ থেরাপিস্ট। পাঁচ বছর অন্তর নিজের কাজের প্রমাণ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন নবীকরণও করাতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘মূলত ভাষার বিকাশের উপরে কাজ করে থাকি আমরা। সেই কাজ কোনও মতেই জোর করে হয় না। এমন ধরনের ঘটনা ঘটালে রেজিস্ট্রেশন বাতিলও হতে পারে।’’

স্পিচ থেরাপিস্ট চন্দ্রিমা মানোজা আবার বলেন, ‘‘খেলার মাধ্যমেই যে কোনও জিনিস শেখাতে হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পরিবারকে এ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি রুটিন তৈরি করে কাজ এগোতে হয়। প্রথমে মূলত হ্যাঁ, না, আরও চাই, চাই না— এগুলোই শেখানোর চেষ্টা হয়। কিছু করতে ভাল লাগছে কি না, সেটা বোঝাতে গিয়েই এই শব্দগুলো শেখে এক জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। কাউকে কোথাও বসিয়ে ক্লাস করাতে হলে সেই জায়গাটার প্রতিও ভালবাসা তৈরি করাতে হয়।’’

জানা যাচ্ছে, বেলেঘাটার ওই সেন্টারের ঘটনায় অভিযুক্ত স্পিচ থেরাপিস্ট অপ্রতিম দাস ‘অডিয়োলজিস্ট অ্যান্ড স্পিচ প্যাথলজিস্ট’ হিসাবে নথিভুক্ত। কিন্তু ‘রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেল, সেই রেজিস্ট্রেশন এখন আর বৈধ নেই। সেখানে লেখা ‘নন অ্যাক্টিভ’! তার মানে কি বৈধ রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই তিনি স্পিচ থেরাপি করে চলেছেন? অপ্রতিমকে এ দিন এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অত কিছু সব সময়ে লাগে না। যা বলার পুলিশকে বলব।’’

এ দিকে, ইতিমধ্যেই বিষয়টি পৌঁছেছে লালবাজারে। বেলেঘাটার ওই সেন্টারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। এই ঘটনার এফআইআরে ‘রাইট টু ডিজ়এবিলিটি অ্যাক্ট’-এর ধারাও যুক্ত করা হতে পারে বলে খবর। এ দিন শিশুটির মায়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে আদালতে। আদালত থেকে ফিরে শিশুটির মা বলেন, ‘‘ছেলেটা এখনও রাতে ঘুমোচ্ছে না। আমি চোখের আড়াল হলেই কান্নাকাটি করছে। যাঁর জন্য ওর এই আতঙ্ক, তাঁর যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Autistic Child harassment Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy