Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মধ্যরাতের শব্দ-তাণ্ডবে ঘুম উড়ল পাড়ার

মানিকতলার এই ঘটনার মতোই ছটপুজো ঘিরে শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত শহর জুড়ে এমনই শব্দ-তাণ্ডবের দৃশ্য দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। কোথাও মাঝরাতে তাঁদের আঁতকে উঠতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন বৃদ্ধ দম্পতি।

রাতের অন্ধকারেই তাসা বাজিয়ে যাচ্ছে ছটের শোভাযাত্রা। শনিবার, মানিকতলার মুরারিপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

রাতের অন্ধকারেই তাসা বাজিয়ে যাচ্ছে ছটের শোভাযাত্রা। শনিবার, মানিকতলার মুরারিপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

রাত তখন প্রায় দুটো। হঠাৎই পাড়া কাঁপিয়ে চিৎকার ‘‘ছোড় ছোড়, জ্বালা জ্বালা’’! কয়েক মুহূর্তেই শুরু হল একের পর এক বাজি ফাটা। কয়েক জন যুবক বাজিতে আগুন ধরিয়ে ছুড়ে দিচ্ছেন সামনের দিকে। পিছনে জনা তিরিশের দল। তাঁদেরও পিছনে আবার তাসা বাজিয়ে নাচতে নাচতে এগোচ্ছেন আরও কয়েক জন। সঙ্গে গাড়ির গায়ে লাগানো তারস্বরে বাজতে থাকা মাইকও রয়েছে।

মানিকতলার এই ঘটনার মতোই ছটপুজো ঘিরে শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত শহর জুড়ে এমনই শব্দ-তাণ্ডবের দৃশ্য দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। কোথাও মাঝরাতে তাঁদের আঁতকে উঠতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন বৃদ্ধ দম্পতি। কোথাও আবার সারা রাত জেগেই কাটাতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। সুভাষ সরোবর-সহ একাধিক জলাশয়ের কাছের বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, থানায় বারবার ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি। এমনই এক ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘‘আগে অভিযোগ করলে নাম প্রকাশ করে দেওয়া হত। এ বার তো নাম গোপন রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে কোথায় পুলিশ, কোথায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ?’’ তাঁর দাবি, ‘‘শনিবার মাঝরাত থেকে পাড়ায় কিছু লোক ঘুরে ঘুরে যে তাণ্ডব করল, তা আগে দেখিনি।’’

দুর্গা ও কালীপুজোর বিসর্জনে শহরের নানা প্রান্ত থেকেই ডিজে বাজিয়ে শব্দ-তাণ্ডবের অভিযোগ এসেছিল। বড় রাস্তাগুলিতে পুলিশ শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ ছিল অনেকের। এত সমালোচনার পরে অন্তত ছটপুজোর সময়ে সক্রিয় থেকে পুলিশ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনবে ভেবেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। তবে শনিবার ছটপুজোর সকাল থেকে সেই আশা পূরণ হয়নি বলে তাঁদের দাবি। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিষেধাজ্ঞা জলে ভাসিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করার অভিযোগ যেমন উঠেছে। তেমনই ৯০ ডেসিবেলের উপরে শব্দবাজি এবং ৬৫ ডেসিবেলের উপরে মাইকের তাণ্ডবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখানোর অভিযোগ উঠেছে শহর জুড়ে। বাদ যায়নি সরোবরের বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত ১১টি জলাশয় সংলগ্ন এলাকাও। তবে শোভাযাত্রার নামে পাড়ায় পাড়ায় শনিবার রাত থেকে যে শব্দ-তাণ্ডব শুরু হয়েছিল তা সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।

মধ্যরাতের বিভীষিকার বেশি অভিযোগ উঠছে দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বোস রোড, কসবা, গাঙ্গুলিবাগান এবং কালীঘাটে। পিছিয়ে থাকেনি উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্ক, শোভাবাজার, বেলেঘাটা, কাঁকুড়গাছি, গৌরীবাড়ি এবং দেশবন্ধু পার্ক সংলগ্ন এলাকা। মানিকতলার মুরারিপুকুরে আবার রাস্তা আটকে রাত ১টা পর্যন্ত কালীপুজোর জলসা চলার অভিযোগ উঠেছে। তা বন্ধ করার কোনও পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল না বলেও অভিযোগ।

তবে ছটের দিনের মতোই এ দিনও শব্দ-তাণ্ডব নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি পুলিশ। লালবাজারের একাধিক কর্তাকে ফোন বা মেসেজে করে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র যদিও বলেছেন, ‘‘শব্দ মাপার যন্ত্র, প্রশিক্ষণ— পুলিশকে তো সবই দিয়ে রেখেছি। তা সত্ত্বেও কাজ না হলে কী বলব? আমরা তো আর কাউকে রাস্তায় নেমে গ্রেফতার করতে পারি না!’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, সপ্তাহে ছ’দিন ১৬ ঘণ্টা পর্ষদের অভিযোগ জানানোর মোবাইল অ্যাপ চালু রয়েছে। তাতেও অভিযোগ জানানো যায়।

কিন্তু ওই ১৬ ঘণ্টা সময়ের পরে মধ্যরাতে শব্দ-তাণ্ডব চললে উপায়? উত্তর মেলেনি কোনও মহল থেকেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy