Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

শব্দ-তাণ্ডব শুরু, জানান দিল গণেশ পুজো

প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ আসা পর্যন্ত অপেক্ষাই বা করা হয় কেন?

অবাধে: গণেশ পুজোর বিসর্জনে দেদার ফাটছে বাজি। কসবা এলাকায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অবাধে: গণেশ পুজোর বিসর্জনে দেদার ফাটছে বাজি। কসবা এলাকায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৮
Share: Save:

এমনিতেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এখন বারো মাসই শব্দদূষণের পার্বণ। পুলিশ থেকে শুরু করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তা, এমনকি চিকিৎসকেরাও এক বাক্যে স্বীকার করেন সে কথা।

কিন্তু তাতে কী! দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যুক্তি, তাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। যাতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকানো যায়। আর পুলিশের দাবি, অভিযোগ এলে তারা ব্যবস্থা নেয়। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ আসা পর্যন্ত অপেক্ষাই বা করা হয় কেন? সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। যদিও গণেশ পুজো ও তার ভাসান বুঝিয়ে দিয়ে গেছে, তাণ্ডবের দিনরাত্রির সবে শুরু!

কিছু বছর আগে পর্যন্ত শব্দ-তাণ্ডব বলতে শুধু কালীপুজোর সময়টুকু বোঝাত। কিন্তু এখন শব্দ-তাণ্ডব চলে বছর জুড়েই। মোড়ে মোড়ে গণেশ পুজো, সেই সঙ্গে ডিজের তাণ্ডব, উপর্যুপরি বাজি ফাটানো— গত কয়েক দিন ধরে সবই চলছে সমান্তরাল ভাবে। এর জেরে শ্রবণশক্তির উপরে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ইএনটি চিকিৎসকদের একাংশ। ইএনটি চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা বলেন, ‘‘শ্রবণশক্তির ক্ষমতা তো বাড়েনি বা এই অতিরিক্ত আওয়াজকে গ্রহণ করার মতো শ্রবণশক্তির বিবর্তনও হয়নি। ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। পুলিশ-প্রশাসন কেন এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করে না, এটা একটা আশ্চর্যের বিষয়!’’ ইএনটি চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা একটি সমীক্ষা করে দেখেছিলাম, যাঁদের শ্রবণশক্তি ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের সমস্যা এই বাজি ফাটানো, ডিজের আওয়াজে বহুগুণ বেড়ে যায়। আর যাঁদের শ্রবণশক্তি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে, এই অতিরিক্ত আওয়াজে তাঁদের স্বভাবগত পরিবর্তন আসে। খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা কাজ করে সব সময়ে। প্রশাসনের তরফে যে সদর্থক ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, সেটা তো দেখা যায় না!’’

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। পর্ষদকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পর্ষদ যে বাজি ফাটানোর জায়গায় উপস্থিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে, সেই পরিকাঠামো তাদের নেই। কারণ, সারা রাজ্যে চেয়ারম্যান-সহ পর্ষদের কর্মীসংখ্যা দেড়শোর মতো। এক-একটি ‘রিজিয়োনাল অফিস’-এর অধীনে একাধিক জেলা রয়েছে। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইদানীং গণেশ পুজো থেকে শব্দবাজি ফাটানো শুরু

হয়েছে, সেটা আমরাও লক্ষ করছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আলাদা করে পর্ষদের কোনও পরিকল্পনা নেই। কারণ, পর্ষদের লোকসংখ্যাই এত কম যে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না।’’ কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, গণেশ পুজোয় শব্দবাজি নিয়ে কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে জমা পড়েনি। আসন্ন পুজোর মরসুমে শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকাতে পুলিশের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেছেন, প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থাই থাকবে। শব্দদূষণ রুখতে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কখনও কোনও মামলা করে, না কি অভিযোগ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় সব সময়েই, সেই প্রশ্ন করা হলে কোনও উত্তর দেননি তিনি।

এ দিকে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ক্ষেত্রে কেন পদক্ষেপ করে না সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘যারা শব্দ-তাণ্ডব করে তারা তো সকলেই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকে। তাই পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করতে সাহস পায় না!’’

অগত্যা, কান ঝালাপালা করা বারোমাস্যার শব্দ-পার্বণ চলবেই!

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Firecrackers Ganesh Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy