ফাইল চিত্র।
জরিমানা থেকে গ্রেফতারি, আইন মোতাবেক সুযোগ রয়েছে সব কিছুরই। কিন্তু বাস্তবে গ্রেফতারি প্রায় হয় না বললেই চলে। জরিমানাও হাতে গোনা। অভিযোগ, আইনরক্ষকদের এ হেন ‘উদারতা’র জেরেই কলকাতা শহরের যত্রতত্র চিত্রিত হয়ে থাকে পানের পিক আর গুটখারঞ্জিত থুতুর দাগে। শহরবাসীর একটি বড় অংশের থুতু ফেলার এই রোগ অবশ্য করোনা পরিস্থিতিতেও সারেনি। দৃশ্যদূষণের পরোয়া তাঁদের কোনও কালেই ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাটাও নেই।
রাজ্যের পাশাপাশি এ শহরে করোনার সংক্রমণ এই মুহূর্তে দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে! সংক্রমণ রুখতে মাস্ক না পরলে বা দূরত্ব-বিধি না মানলে লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশকে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় করোনা-বিধি নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে পুলিশ। অথচ, সেই পুলিশকেই কিন্তু থুতু ফেলা আটকানোর ব্যাপারে কার্যত তেমন কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায় না। দু’টি-একটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা যে বিধি ভাঙার সংখ্যার তুলনায় খুবই সামান্য, লালবাজারের হিসাবেই তা স্পষ্ট।
লালবাজারের তথ্য বলছে, শনিবার রাত ৮টা থেকে রবিবার রাত ৮টা পর্যন্ত শহর জুড়ে প্রকাশ্যে থুতু বা পান-গুটখার পিক ফেলায় ন’জনের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নিয়েছে পুলিশ। আর শুক্রবার রাত ৮টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ওই সংখ্যাটা ছিল ১৪। গত ১ জানুয়ারি রাত ৮টা থেকে ২ জানুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বাধিক ২২ জনের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছিল বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার এই পরিসংখ্যানেই পুলিশি গাফিলতির ছবিটা স্পষ্ট। সোমবারও শহরে ঘুরে দেখা গেল, যত্রতত্র চলছে থুতু ফেলার প্রতিযোগিতা। একাধিক জায়গায় সামনে পুলিশ থাকলেও তারা কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায়। কখনও সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ির জানলা থেকে, কখনও বা বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়েই চলছে থুতু ফেলা। রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা প্রশাসনিক ভবনও।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অতিমারির এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে থুতু ফেলার এই বদ অভ্যাসের কারণে। কারণ, কোথাও থুতু ফেলা হলে তার ‘ড্রপলেট’ ওই এলাকার বাতাসে বহু ক্ষণ ভেসে থাকতে পারে। যা নাকে-মুখে প্রবেশ করলে সংক্রমিত হতে পারেন অন্য এক জন।
জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘শুধু করোনা নয়, যে কোনও ধরনের সংক্রামক রোগই থুতু থেকে ছড়াতে পারে। সেই কারণে এই অভ্যাস বিপজ্জনক। জনবহুল স্থানে ফেলা পানের পিক অথবা থুতুর ‘ড্রপলেট’ অন্যকে সহজেই সংক্রমিত করতে পারে। তাই করোনার সংক্রমণ আটকাতে অন্যান্য বিধি বলবৎ করার পাশাপাশি প্রকাশ্যে থুতু ফেলা বন্ধেও আরও কঠোর হতে হবে।’’
এ বিষয়ে আইন কী বলছে? পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে অপরাধীর বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ। গ্রেফতারের পাশাপাশি জরিমানাও করা যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, মাঠে বা খোলা জায়গায় থুতু ফেলা হলে কলকাতা পুলিশ আইনেও ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যায়। এ ছাড়া, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা জনবহুল স্থানে থুতু ফেললে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রহিবিশন অব স্মোকিং অ্যান্ড স্পিটিং অ্যান্ড প্রোটেকশন অব হেলথ অব নন-স্মোকার অ্যান্ড মাইনর্স অ্যাক্ট’-এও মামলা করতে পারে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে।
তবে সুযোগ থাকলেও বহু ক্ষেত্রেই যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তা মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্মীদেরই একাংশ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘এটা মানুষের একটি বড় অংশের সচেতনতার অভাব। এই অভ্যাস বন্ধে সারা বছরই প্রচার চলে। এমনকি, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy