গড়িয়াহাট এবং হাতিবাগান চত্বরে নেমেছে ক্রেতার ঢল। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দিনের শুরুটা যদি হয় কয়েক পশলা বৃষ্টির, তা হলে বাকিটা অবশ্যই উৎসবমুখী জনতার। যে জনতার ঢল মাসের শেষ রবিবার দেখা গেল হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের মতো বাজারগুলিতে। দেদার কেনাকাটা চলল শহরের শপিং মলগুলিতেও। তবে ভিড়ের নিরিখে শপিং মলকে এ দিন টেক্কা দিল সেই বাজারই। কোথাও ভিড়ের চাপ সামলাতে বাড়তি পুলিশ নামাতে হল, কোথাও আবার সন্ধ্যার পরে ভিড়ের জেরে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে হল রাস্তার এক দিকের যান চলাচল। ধর্মতলা বাজারে আবার এর মধ্যেই দেদার চলল ‘গুলাবি সেল’।
ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এর (যে নামটি পাকিস্তানের দেওয়া) প্রভাব শহরে পড়বে বলে এমনিতেই জনমানসে প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের কয়েক জায়গায় বৃষ্টি শুরু হতেই তাই ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। দিনভর বৃষ্টি চললে আদৌ পুজোর বাজার জমবে কি না, সেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেন তাঁদের অনেকে। যদিও বৃষ্টি কমে ভিড় বাড়তেই হাসি ফোটে উৎসাহী ব্যবসায়ীদের মুখে। তেমনই এক ব্যবসায়ীকে এ দিন ‘গুলাবি সেল’ বলে প্রবল চেঁচাতে দেখা গেল ধর্মতলা বাজারে। তরুণ সাহা নামে সেই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রতি বার কিছু না কিছু বলে লোক ডাকি। এখন করোনা সেল বলে ডাকলে লোকে আর তাকায় না। সকালে শুনলাম, ঘূর্ণিঝড় গুলাব ধেয়ে আসছে। তাই এ দিন গুলাবি সেল দেব বলে ঠিক করেছি।’’
পিছিয়ে নেই শপিং মলও। এ দিন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে প্রায় ৭৫ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল বলে জানালেন সেখানকার আধিকারিক দীপ বিশ্বাস। ভিড় জমলেও, কেনাকাটা করতে আসা অনেককেই ঘূর্ণিঝড়ের ভয় অবশ্য পিছু ছাড়েনি। শপিং মল থেকে বেরোনোর মুখে নিখিল গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখেই মাথা বাঁচাতে শপিং মলে এসেছি। বাইরের কেনাকাটা অন্য দিন।’’ গড়িয়াহাটের প্রবল ভিড়ের মধ্যেও দেখা গেল, বৃষ্টি নিয়েই আলোচনা। সীমা ঘোষ নামের এক মধ্যবয়সি বললেন, ‘‘সোমবার থেকে বৃষ্টি কতটা হবে বুঝতে পারছি না। পুজোর কী হবে তা-ও জানি না। কেনাকেটা যখন করতেই হবে, এই বেলা সেরে নেওয়া ভাল। রোদ উঠছে দেখে তাই বেরিয়ে পড়েছি।’’ পাশেই মাস্কহীন এক ক্রেতাকে দেখে মেয়ের হাত ধরে টেনে সরিয়ে সীমাদেবী বললেন, ‘‘বৃষ্টিতে ভিজলেই ঠান্ডা লাগছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভয় এই মাস্কহীন লোকগুলোকে। ভাল ভাবে পুজো কাটাতে হলে কিন্তু মাস্ক পরতেই হবে।’’
এই সচেতনতা অবশ্য উধাও অনেকের মধ্যেই। এ দিন গড়িয়াহাট বাজারে এমনই জনতার ঢল নেমেছিল যে, দড়ি দিয়ে পুলিশকে রাস্তা পারাপার করাতে হচ্ছিল। তার মধ্যেই দেখা গেল অসংখ্য মাস্কহীন পথচারীকে। গড়িয়াহাটের একটি শাড়ির দোকানে দেখা গেল, সুমেধা গুপ্ত নামে এক মহিলা মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। ওই মহিলার অবশ্য দাবি, ‘‘গত কালই প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আর মাস্ক পরার দরকার আছে নাকি? এখন করোনা নয়, খবরে ঘূর্ণিঝড় চলছে!’’
হাতিবাগান বাজারেও দেখা গেল, মাস্কহীন জনগণের ভিড়। সন্ধ্যার পরে সেখানকার পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, বাড়তি পুলিশ নামাতে হল শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ড এবং বড়তলা থানাকে। এক সময়ে ভিড়ের চাপে বন্ধই করে দিতে হয় হাতিবাগানের এক দিকের রাস্তা। সেখানে ভিড়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত মাস্কহীন কলেজপড়ুয়ার অদ্ভুত যুক্তি, ‘‘বৃষ্টির তাড়নায় ছাতা নিতে গিয়ে মাস্ক পরতে ভুলে গিয়েছি।’’ তাঁর সঙ্গীর অবশ্য মন্তব্য, ‘‘এই মাত্র পুলিশ আমাদের আগে মাস্ক কিনে পরতে বলেছে। কিন্তু পুজোর বাকি আর পনেরো দিন। দ্রুত কেনাকাটা সেরে নিতে গেলে এত কিছু আর মাথায় রাখা যায় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy