Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Masks

‘দায়িত্ববোধের অভাবেই জীবন থেকে মাস্ক বাদ!’

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, ‘যাঁরা জনসমক্ষে মাস্ক পরছেন না, তাঁরা অন্য নাগরিকের মৌলিক অধিকার (জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার) খর্ব করছেন।’

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২১
Share: Save:

বায়ুদূষণ রয়েছে। করোনা সংক্রমণ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, ‘যাঁরা জনসমক্ষে মাস্ক পরছেন না, তাঁরা অন্য নাগরিকের মৌলিক অধিকার (জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার) খর্ব করছেন।’

কিন্তু তার পরেও মাস্ক কেন ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনি? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পিছনে রয়েছে, অনবধানতা (কেয়ারলেসনেস), দায়িত্ববোধ এবং সহমর্মিতার অভাব। কারণ, মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণ থেকে শুধু নিজেকেই নয়, অপরকেও যে সুরক্ষিত রাখা যায়, এ কথা বার বার বলা সত্ত্বেও জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ, এমনকি, রাজনৈতিক নেতৃত্বও সেই দায়িত্ব পালন করছেন না।

অথচ, বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে সব দেশে বায়ুদূষণ ও মহামারির প্রবণতা বেশি, সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মাস্ক ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যার বড় উদাহরণ জাপান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষক জানাচ্ছেন, ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু, ১৯৫০-’৬০ সালে জাপানের শিল্পনীতির কারণে বায়ুদূষণ, তারও পরে সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-এর (সার্স) কারণে মাস্ক সেখানকার সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। ওই গবেষকের কথায়, ‘‘উল্টো দিকে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনের নাগরিকেরা এত দিন ধরে মাস্ক পরে এসেছেন বায়ুদূষণ রোধের জন্য। যাতে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম২.৫) শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি না করতে পারে।’’

২০২০ সালে বিশ্বের সব থেকে দূষিত শহরের রিপোর্ট গত মাসে প্রকাশ করেছিল এক বহুজাতিক সংস্থা। তাতে প্রথম ৩০টি দূষিত শহরের মধ্যে ২২টিই ভারতের! আবার ওই সংস্থারই শনিবারের বায়ুদূষণের রিপোর্ট জানাচ্ছে, বিশ্বের সব থেকে দূষিত প্রথম ৩০টি শহরের মধ্যে তিনটি হল এ দেশের। মুম্বই, কলকাতা এবং দিল্লি।

কিন্তু তার পরেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশেই মাস্ক পরায় কেন এত অনীহা?

‘ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ফর ভাইরোলজি’-র প্রেসিডেন্ট এবং ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি’র এমেরিটাস বিজ্ঞানী অনুপম বর্মার কথায়, ‘‘এই প্রবণতাকে শুধুমাত্র একটি ভাষাতেই ব্যাখ্যা করা যায়, তা হল কেয়ারলেসনেস। না হলে মাস্ক পরে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি অন্যকেও যে সুরক্ষিত রাখা যায়, তা সবাই জানেন।’’ আর এই অনবধানতার কারণেই করোনা সংক্রমণ ফের ছড়াচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তথা ইমিউনোলজিস্ট ইন্দিরা নাথ জানাচ্ছেন, এটা সামাজিক সমস্যা। আর এই সমস্যা আরও দৃঢ় হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেরা নিয়ম লঙ্ঘন করায়। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরই জনতার কাছে আবেদন করতে হত, ‘মাস্ক পরুন’। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই যেখানে মাস্ক পরছেন না, সেখানে অন্যদের আর কী বলবেন? সে তামিলনাড়ুর নির্বাচনী প্রচার বা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন, যা-ই হোক না কেন, সর্বত্র একই ছবি বলে জানাচ্ছেন ইন্দিরাদেবী।

তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে মনে করছেন, আমার কিছু হলেও ঠিক সামলে নেব। কিন্তু এক বারও আমরা এটা ভেবে দেখছি না যে, আমি সামলাতে পারলেও আমার মাধ্যমে অন্যদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। ফলে সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধের অভাবেই জীবন থেকে মাস্ক বাদ! যা করোনা-কালে জীবনহানির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Infection Masks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy