প্রতীকী ছবি।
লাইসেন্স তো নেই-ই, সঙ্গে কোনও প্রশিক্ষকও নেই! অথচ জানা নেই পথের নিয়ম-বিধিও। অভিযোগ, তবু গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন অনেকেই। লকডাউনের সময় থেকেই গাড়ি চালানো শেখার নামে স্টিয়ারিং ধরা এই বেপরোয়া চালকদের নিয়েই কালঘাম ছুটছে পুলিশের। আনলক ১-এ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, ছোঁয়াচ বাঁচাতে রাতারাতি কিনে ফেলা মোটরবাইক শেখার হিড়িক!
কলকাতা পুলিশের ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ড সূত্রের খবর, গত এক মাসে এ ভাবে গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে দুর্ঘটনার একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই চালকের লাইসেন্স ছিল না। বেশির ভাগ দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘ভোরের দিকেই ঘটেছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা। ২৫টি গার্ড মিলিয়ে এই ধরনের অভিযোগ প্রায় ৩৪টি। এর মধ্যে দক্ষিণ কলকাতাতেই দায়ের হয়েছে ১৯টি অভিযোগ।’’ গত সপ্তাহে যোধপুর পার্কে গাড়ি চালানো শিখতে বেরিয়ে প্রাতর্ভ্রমণকারী এক বৃদ্ধকে পিষে মারার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত দাবি করেছেন, লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন প্রশিক্ষকের সঙ্গে গাড়ি চালানো শিখতে বেরোতেন তিনি। ওই দিন প্রশিক্ষক আসেননি, লাইসেন্স না-থাকা সত্ত্বেও তিনি একাই বেরিয়েছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরযান আইনে গাড়ি চালানো শেখার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। নথিভুক্ত ড্রাইভিং স্কুল থেকে প্রথমে গাড়ি চালানো শিখতে হয়। কেউ নিজের গাড়ি নিয়ে শিখতে চাইলে পাশে স্থায়ী লাইসেন্সধারী চালক থাকা বাধ্যতামূলক। শেখার পরে শিক্ষানবিশ চালককে লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষা দিতে হয়। সেটি পেলে গাড়ির সামনে ও পিছনে ‘এল’ বোর্ড লাগাতে হয়। সূর্যাস্তের পরে লার্নার লাইসেন্সধারী চালকের গাড়ি বা মোটরবাইক চালানো নিষিদ্ধ। সূর্যাস্তের আগে গাড়ি চালাতে হলে সঙ্গে স্থায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক থাকা বাধ্যতামূলক। লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পরের ৩০ দিন নিয়মিত সরকারি মোটর ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা। লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গাড়ি চালানোর চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েই পাকা লাইসেন্স পাওয়া যায়।
চলো নিয়মমতে
• স্টিয়ারিংয়ে বসলে পাশে থাকতে হবে সরকারি খাতায় নথিভুক্ত প্রশিক্ষককে
• লার্নার লাইসেন্স পেলে গাড়ির সামনে ও পিছনে ‘এল’ বোর্ড লাগানো বাধ্যতামূলক
• সূর্যাস্তের পরে শিক্ষানবিশ চালক স্টিয়ারিং ধরবেন না
• সূর্যাস্তের আগে চালালে শিক্ষানবিশ চালকের সঙ্গে স্থায়ী লাইসেন্সধারীকে থাকতেই হবে
• লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পরের ৩০ দিন নিয়মিত সরকারি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ
• লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ফের পরীক্ষা দিতে হবে স্থায়ী লাইসেন্স পাওয়ার জন্য
যদিও এই সব নিয়ম উড়িয়েই কলকাতায় প্রশিক্ষণহীন, অপটু হাতে লাইসেন্স চলে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিছু ক্ষেত্রে টাকা দিতে পারলে লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষাও দিতে হয় না বলে অভিযোগ। এর সঙ্গেই এখন যুক্ত হয়েছে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে গন্তব্যে যেতে মোটরবাইক এবং গাড়ি কেনার হিড়িক। শহর এবং শহরতলির কোনও শো-রুমেই এই মুহূর্তে গাড়ি কিনতে যাওয়া ব্যক্তিকে লাইসেন্স আছে কি না, জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে না বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
যদিও ক্রমবর্ধমান পথ দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখেই লাইসেন্স না-থাকা ব্যক্তিকে গাড়ি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল রাজ্য সরকার। এক বার পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহের সূচনায় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেছিলেন, ‘‘এখানে পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন, লাইসেন্স পাওয়া নয়!’’
গত বছরই পাশ হওয়া মোটরযান (সংশোধনী) বিলে জরিমানা এবং হাজতবাসের মেয়াদ বাড়ানো হলেও লাইসেন্স দুর্নীতি ও প্রশিক্ষণের নামে বেপরোয়া গাড়ি চালানো যে বন্ধ হয়নি তা স্পষ্ট কলকাতা পুলিশের গত এক মাসের রিপোর্টেই। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘লার্নার লাইসেন্সের নিয়ম কারা মানছেন না, তা গাড়ি ধরে ধরে দেখা সম্ভব নয়। অত লোক নেই পুলিশে! কিন্তু কেউ বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর সময়ে ধরা পড়লে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।’’
তা হলে দুর্ঘটনা কমে না কেন? উত্তর নেই ওই পুলিশকর্তার কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy