পায়ের সমস্যা নিয়ে ফলতা থেকে এসএসকেএমে এসেও ভর্তি হতে পারল না শাকিল শেখ নামে এক কিশোর। নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতাল চত্বরে তৈরি আন্দোলন মঞ্চের পোস্টারে লাল কালিতে লেখা, ‘গুজবে কান দেবেন না। রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা চালু আছে।’ যদিও মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে, এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের সামনে হতাশ মুখে বসে আছেন হাবিব শেখ। শুক্রবার সকাল থেকে অনেক ঘুরেও বছর বারোর ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি তিনি। হঠাৎ করেই ছেলের শরীরের নিম্নাংশ অসাড় হয়ে হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন তাকে কোথায় নিয়ে যাবেন, বুঝতে পারছেন না হাবিব। ট্রমা কেয়ারের সামনে বসে ছেলের ক্রমশ ফুলতে থাকা পায়ে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের বিপাকে ফেলে এই আন্দোলন আর কত দিন?’’
এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে বিশেষ ফারাক নেই প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। এ দিন সকালে হাতিবাগান থেকে বৃদ্ধা মা ঝর্না দত্তকে সেখানে নিয়ে এসেও ভর্তি করাতে পারেননি শঙ্কর দত্ত। জোর করে ভর্তি করালেও ‘রোগী পড়ে থেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারেন’ শুনে বেসরকারি হাসপাতালের পথ ধরেন তিনি। মাকে গাড়িতে তুলে শঙ্কর বলেন, ‘‘আমাকে এখানকার লোকজনই বললেন, মাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে। এখন সব সরকারি হাসপাতালেরই এক অবস্থা। এই অবস্থা বেশি দিন চললে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’ ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে কিছুটা দূরেই চিকিৎসকদের আন্দোলন মঞ্চ। আন্দোলনকারী জনাকয়েক চিকিৎসককে দেখা গেল, গোল হয়ে বসে হাসি-ঠাট্টায় মজে থাকতে।
সুপ্রিম কোর্ট কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে এ দিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেছেন, ‘‘আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও রাজ্যে আট-দশ হাজার আবাসিক চিকিৎসক কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে মেডিক্যাল কলেজ-সহ সর্বত্র রোগী-পরিষেবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্নায়ুরোগের চিকিৎসা শুধু মেডিক্যাল কলেজগুলিতেই পাওয়া যায়। সেই পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই দিল্লি ও কল্যাণীর এমসের আবাসিক চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তাই আমাদের আবাসিক চিকিৎসকদেরও কাজে ফেরার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’’
পরিষেবা সচল আছে বলে আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা যে দাবি করছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের যে মিল নেই, এ দিন শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ঘুরে চাক্ষুষ করা গেল। কর্মবিরতির দৈর্ঘ্য যত বাড়ছে, হাসপাতালে আসা রোগীদের ভোগান্তিও তত বাড়ছে। সিনিয়র চিকিৎসকেরা সব কিছু সামলানোর দাবি করলেও পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা উঠে আসছে তাঁদের কথাতেই। এসএসকেএমের এক সিনিয়র চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হচ্ছে। যতটা সম্ভব, চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ৫০ জনের কাজ তিন জন করলে যেমন হয়, এখন তা-ই হচ্ছে।’’
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে অসুস্থ বাবা বিজয় দলুইকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি করাতে পারেননি মাম্পি দলুই। এসএসকেএম, শম্ভুনাথ পণ্ডিত ঘুরে এ দিন দুপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যালে বাবাকে নিয়ে আসেন তিনি। সেখানেও ভর্তির বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেননি চিকিৎসকেরা। জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, মাত্র এক জন চিকিৎসক রোগীদের সামলাচ্ছেন। পাশের টেবিলে রয়েছেন দু’জন নার্স। জরুরি বিভাগের সামনেই আন্দোলনে বসে রয়েছেন জনাকয়েক চিকিৎসক। তাঁদেরই এক জন স্নেহাশিস মণ্ডল। কল্যাণী এমসে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার কথা বলতেই স্নেহাশিস বললেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের দাবির কোনওটিই পূরণ করেনি। নিরাপত্তা তো নেই-ই, পরিকাঠামোও বেহাল। এই অবস্থায় কাজ করা যায়?’’
ভোগান্তির একই ছবি নীলরতন সরকার এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের টিকিট করেও চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন বিকেলে মাথায় এবং মুখে চোট নিয়ে মুরারিপুকুর থেকে পরিজনদের সঙ্গে আর জি করে এসেছিলেন বাপন সাহা। ট্রমা কেয়ারে অনেক ক্ষণ তাঁকে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। রোগীর সঙ্গে আসা মেঘনাদ সাহা বললেন, ‘‘আমরাও বিচার চাই। রাত দখলের দিন পথেও নেমেছিলাম। কিন্তু আমরা তো গরিব, চিকিৎসা না পেলে কোথায় যাব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy