ভোগান্তি: পরিষেবা পেতে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইনে রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। সোমবার, এসএসকেএমে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বহির্বিভাগের বাইরে লম্বা লাইন। সকলেই অপেক্ষা করে আছেন, কত ক্ষণে ভিতরে পৌঁছে চিকিৎসককে দেখাতে পারবেন। লাইনে দাঁড়ানো বেশির ভাগ মানুষই অন্য জেলা থেকে এসেছেন শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে। কিন্তু সোমবার শহরের প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই স্নাতকোত্তর পড়ুয়া-চিকিৎসকদের (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি বা পিজিটি) কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়লেন রোগীরা। দুপুরের মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার জায়গায় তা গড়িয়ে হল বিকেল।
চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। সেপ্টেম্বরে হয় সেই নিট-পিজি পরীক্ষা। ১৭ দিনের মধ্যে ফলও বেরিয়ে যায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করায় শুরু হয়নি কাউন্সেলিং। সেই কারণে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা না আসায়, হাসপাতালের কাজের চাপ তাঁদের উপরে বেশি মাত্রায় এসে পড়ছে বলে দাবি দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া-চিকিৎসকদের। তাঁদের কথায়, ‘‘করোনার কারণে দেরিতে পরীক্ষা মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন কাউন্সেলিংয়ের উপরে সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে, কবে সব কিছু স্বাভাবিক হবে তা স্পষ্ট না হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।’’
উচ্চশিক্ষায় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্য ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলেছে কেন্দ্র। গত সেপ্টেম্বরে নিট-পিজি-র কাউন্সেলিং চলার সময়ে সংরক্ষণের এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। তার পরেই স্নাতকোত্তর পড়ুয়া-চিকিৎসকদের কাউন্সেলিংয়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে সর্বোচ্চ আদালত। আগামী ৬ জানুয়ারি সেই মামলার শুনানি।
পিজিটি-রা জানাচ্ছেন, প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা না আসায় একটা বড় অংশ ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। সেই কাজের চাপ বইতে হচ্ছে দ্বিতীয় বর্ষকে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পরেও এই অতিরিক্ত চাপে তাঁদের মানসিক
এবং শারীরিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে। শহরের একটি হাসপাতালের এক পড়ুয়া-চিকিৎসক বলেন, ‘‘রাজ্যের তরফেও যদি কাউন্সেলিং চালু করা হয় কিংবা বহির্বিভাগের জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসক দেওয়া
হয়, তা হলেও আমাদের সমস্যা
কিছুটা মেটে।’’
এই সমস্যার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ‘ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন ইন্ডিয়া’। গত ২৭ নভেম্বর শুরু হয়েছে ওই প্রতীকী কর্মবিরতি। তবে ২৭ ও ২৮ নভেম্বর শনি এবং রবিবার হওয়ায় ওই দু’দিন কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। বদলে সোমবার
থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া- চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, ‘‘এই কর্মবিরতিকে আন্দোলন বললে ভুল হবে। সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদও নয়। বরং এই প্রতীকী কর্মবিরতির মাধ্যমে দ্রুত কাউন্সেলিং শুরু করার আবেদন জানাচ্ছি।’’ এ দিন এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এন আর এস-সহ অন্যান্য হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন, শল্য, স্ত্রী-রোগ, অস্থি-সহ বিভিন্ন রোগের বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড়। জানা যায়, বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন শুধু সিনিয়র, হাউসস্টাফ এবং মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসকেরা।
এ দিন পিজি-র বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা সফিকুল বললেন, ‘‘দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু লাইন এগোচ্ছে না। বাড়ি ফেরার ট্রেন মিস হয়ে
গেলে সারা রাত স্টেশনেই কাটাতে হবে।’’ শহরের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ৬০০ পিজিটি রয়েছেন। এক হাসপাতালের পিজিটি-র দাবি, ‘‘বহির্বিভাগে কাজে যোগ না দিলেও, অন্তর্বিভাগের রোগী দেখা কিংবা অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছি। রোগী পরিষেবা ব্যাহত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আর বহির্বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনও নয়। তবে চিকিৎসা পেতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy