Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

হাসপাতালেই ‘ডেঙ্গি-আক্রান্ত’ হয়ে মৃত্যু রোগীর

এনামুল জানান, গত ২০ অগস্ট উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী। প্রসবের পরে আবিদার প্লাসেন্টা অন্ত্রের সঙ্গে এমন ভাবে জড়িয়ে যায় যে, সেটি বাদ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন রোগিণী, এমনই অভিযোগ তুললেন তাঁর পরিজনেরা। গত বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় হাওড়ার দক্ষিণ সাঁকরাইলের বাসিন্দা আবিদা খাতুনের (২২)। তাঁর স্বামী এনামুল শেখ বলেন, ‘‘হাসপাতালে থাকাকালীন কী ভাবে আমার স্ত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেন বুঝতে পারছি না।’’ যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগিণীর মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

এনামুল জানান, গত ২০ অগস্ট উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী। প্রসবের পরে আবিদার প্লাসেন্টা অন্ত্রের সঙ্গে এমন ভাবে জড়িয়ে যায় যে, সেটি বাদ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ঝুঁকি না নিয়ে ওই মহিলাকে তড়িঘড়ি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) স্থানান্তরিত করা হয়। এনামুল জানান, কলকাতা মেডিক্যালের স্ত্রী-রোগ বিভাগে অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর স্ত্রীর অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। ২৫ অগস্ট আবিদার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এর পরে খিঁচুনি শুরু হলে তিনি সংজ্ঞা হারান। ২৯ অগস্ট আবিদার ডেঙ্গি ধরা পড়ে। হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ওই দিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এলাইজা
পদ্ধতিতে রোগীর রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল ডেঙ্গি সংক্রমণ পজিটিভ। এনামুলের কথায়, ‘‘ধীরে ধীরে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় আবিদা। ডাক্তারেরা জানান, ডেঙ্গির পাশাপাশি রক্তেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে।’’ এর পরে ১৩ সেপ্টেম্বর আবিদাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার মারা যান দুই সন্তানের জননী।

স্বামীর বক্তব্য, উলুবেড়িয়ায় ভর্তির আগে বা পরে আবিদার জ্বর ছিল না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ন’দিনের মাথায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই কেন? হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মৃত্যুর যেটা মূল কারণ, সাধারণত সেটাই লেখা থাকে ডেথ সার্টিফিকেটে।’’ আবিদার ডেথ সার্টিফিকেটে সংক্রমণের জেরে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। যদিও এনামুলের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় রোগীর ডেঙ্গি হলে তা দুর্ভাগ্যজনক। সদ্যোজাত ছাড়াও আমার পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ঠিক মতো
চিকিৎসা হলে দুই শিশু তাদের মাকে হারাত না।’’

ইডেন ভবনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এডিস ইজিপ্টাইয়ের কামড়ে আবিদার ডেঙ্গি হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রধান পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তা হলে তো অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হতেন। তেমন তো কিছু ঘটেনি।’’ বরং চিকিৎসকদের মত, বাড়িতে থাকাকালীনই ওই মহিলার শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু প্রবেশ করেছে। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় সাঁকরাইলে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯। এর পরে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ডোমজুড়ে। দক্ষিণ সাঁকরাইলে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার রিপোর্টে জ্বর বা ডেঙ্গি রয়েছে কি না দেখতে হবে।’’

ইন্দ্রনীলবাবু আরও বলেন, ‘‘ডেঙ্গি সংক্রান্ত রোগীদের জন্য আমাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। হাসপাতাল চত্বর বা আশপাশের এলাকায় কারও ডেঙ্গি হয়েছে, এমন কোনও তথ্য পাইনি। ফলে ওই রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই আশঙ্কা কম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy