Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Death

জানলা দিয়ে লাফ, মেডিক্যালে আত্মঘাতী রোগী

সম্প্রতি নিউরো-মেডিসিনের ওয়ার্ডটি সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিংয়ের সাততলায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

মর্মান্তিক: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই অংশে (উপরে) উদ্ধার হয় রিয়াজউদ্দিনের দেহ (নীচে)। সাততলার এই জানলা থেকে বুধবার ঝাঁপ দেন তিনি (ডান দিকে)। ছবি: রণজিৎ নন্দী ও নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই অংশে (উপরে) উদ্ধার হয় রিয়াজউদ্দিনের দেহ (নীচে)। সাততলার এই জানলা থেকে বুধবার ঝাঁপ দেন তিনি (ডান দিকে)। ছবি: রণজিৎ নন্দী ও নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৩৭
Share: Save:

ঝাঁ-চকচকে ওয়ার্ডে একটি ব্লকের দু’পাশে চারটি করে মোট আটটি শয্যা। কাছেই রয়েছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বসার জায়গা। ওয়ার্ডের সেই অংশে ঢোকার মুখে বাঁ দিকের ৬৫১ নম্বর শয্যায় ভর্তি ছিলেন রিয়াজউদ্দিন মণ্ডল (২০)। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সেই শয্যা থেকে উঠে দৌড়ে জানলার কাছে যান রিয়াজউদ্দিন। তার পরে জানলা খুলে লাফ দেন নীচে। বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো-মেডিসিন বিভাগে। নদিয়ার ধানতলার বাসিন্দা রিয়াজউদ্দিনকে অন্য দুই রোগীর পরিজনেরা বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে।

সম্প্রতি নিউরো-মেডিসিনের ওয়ার্ডটি সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিংয়ের সাততলায় স্থানান্তরিত হয়েছে। মঙ্গলবার রিয়াজকে নিউরো-মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করান তাঁর বাবা মোহর আলি মণ্ডল। ওই ওয়ার্ডের ৬৫৮ নম্বর শয্যায় রয়েছে ডানকুনির বাসিন্দা শাহ আলম মণ্ডল নামে এক কিশোর। তার বাবা সুজারুসুন মোল্লা জানান, হাসপাতালের ভিতরে রক্ত পরীক্ষা কোথায় হয়, তা রিয়াজের বাবা জানতেন না। জায়গাটি দেখিয়ে দিতে তিনি মোহরের সঙ্গে নীচে নামেন। ফিরে এলে নার্সরা মোহরকে জানান, তাঁর ছেলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। খবর শুনেই জরুরি বিভাগে দৌড়ে যান মোহর। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই রিয়াজউদ্দিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ চিকিৎসাধীন ওই যুবক যখন ঝাঁপ দিতে ছুটছেন, ৬৫৪ এবং ৬৫৫ নম্বর শয্যার রোগীর পরিজনেরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। নিমতার বাসিন্দা, ৬৫৪ নম্বর শয্যার রোগী ইরফান আলির বাবা বসির আলি জানান, তিনি ছেলের কাছেই ছিলেন। হঠাৎ দেখেন, নিজের শয্যা থেকে উঠে রিয়াজউদ্দিন জানলার উপরে উঠে পড়েছেন। পাশের ৬৫৫ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধের জামাই রিয়াজের ডান হাত ধরে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন। কিন্তু পারেননি। বসির বলেন, ‘‘বৃদ্ধের জামাই হাত ধরলেও সেটা ওঁর উল্টো দিক হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হচ্ছিল। আমি ওই যুবকের জামা টেনে ধরি। কিন্তু তখন ও প্রায় শূন্যে ঝুলছিল। অতটা ওজন আমিও ধরে রাখতে পারিনি। জামা ছিঁড়ে নীচে পড়ে গেল। কিছু করতে পারলাম না!’’

আরও পড়ুন: এক দিনে জোড়া দুর্ঘটনা, মৃত পাঁচ

পুলিশ সূত্রের খবর, এক ওয়ার্ড বয় জানিয়েছেন, তিনি এক সহকর্মীকে কী ভাবে ‘অক্সিজেন মাস্ক’ পরাতে হয়, তা শেখাচ্ছিলেন। আচমকাই অন্য রোগীর পরিজনেরা চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘‘লাফ দিল! লাফ দিল!’’ এ দিন ঘটনার সময়ে ওই ওয়ার্ডে রাউন্ড দিচ্ছিলেন নিউরো-মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান সন্দীপ পাল। রিয়াজের পাশের ব্লকে রোগী দেখছিলেন তিনি। বিভাগীয় প্রধান এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, তিনি যা বলার সুপারকে বলেছেন।

হাসপাতালের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ জানান, ‘অটোইমিউন এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম’ নিয়ে ওই রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। সঙ্গে মনোরোগের লক্ষণও ছিল। সুপারের কথায়, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে যা শুনেছি, তাতে মনে হচ্ছে, ওই যুবকের স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার লক্ষণও ছিল।’’ ছেলের মানসিক সমস্যা ছিল বলে জানিয়েছেন মৃতের বাবাও।

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কারখানায় ট্রাক, আহত পাঁচ

এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, যে রোগীর মানসিক সমস্যা ছিল, তাঁর জন্য কি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল না? রিয়াজউদ্দিনের বাবা বলেন, ‘‘সকলের চোখের সামনে ছেলেটা ঝাঁপ দিল! কেউ বাঁচাতে পারল না?’’ ওয়ার্ডে সে সময়ে উপস্থিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী, সকলেরই বক্তব্য, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটি ঘটে যায়। সুপার বলেন, ‘‘কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিংয়ে জানলার বাইরে গ্রিল দেওয়ার জন্য হাসপাতালের পূর্ত বিভাগকে বলেছি।’’ এ দিন পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আসেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Suicide Calcutta Medical College and Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy