Advertisement
E-Paper

ইউপিআই ব্যবস্থায় টোকেন কেনা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে মেট্রোয়

যেখানে মেট্রো সফর হয়তো আধ ঘণ্টার, সেখানে ২০ থেকে ২৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে স্রেফ টোকেন কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৭:১৪
Share
Save

কর্মী হ্রাস পাওয়ায় উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে গত কয়েক বছর ধরেই কাউন্টারের সংখ্যা কমছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রতিটি স্টেশনে একাধিক স্বয়ংক্রিয় টোকেন ভেন্ডিং যন্ত্র বসিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, নামে স্বয়ংক্রিয় হলেও আদতে কয়েক প্রজন্মের পুরনো ওই যন্ত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেট্রোকর্মীদের তদারকি ছাড়া যাত্রীদের সাড়া মিলছে না। তবে, ওই যন্ত্রের থেকেও বড় বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিয়েছে ইউপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস) ব্যবস্থায় টোকেন কেনার সুযোগ।

প্রতিটি স্টেশনে একটি করে নির্দিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করে যাত্রীরা তাঁদের গন্তব্যের ভাড়া মিটিয়ে টোকেন পাচ্ছেন। কিন্তু যে সব যাত্রী স্মার্ট কার্ড কিংবা মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করেন না, তাঁদের অভিযোগ, টোকেন কিনতে গিয়ে যে পর্যায়ের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে, তাতে অনেকের মনেই ফিরে আসছে নোটবন্দির দুঃসহ স্মৃতি।

যাত্রীদের ওই অংশটি জানাচ্ছে, দমদম, এসপ্লানেড, কবি সুভাষের মতো কিছু স্টেশন ছাড়া বেশির ভাগ স্টেশনে সকাল ও সন্ধ্যা মিলিয়ে বিভিন্ন দিকের প্রবেশপথে সর্বাধিক দু’টি বা তিনটি কাউন্টার খোলা থাকছে। যার মধ্যে একটি কাউন্টার বাধ্যতামূলক ভাবে ইউপিআই ব্যবস্থার। সেখানে নগদ টাকার বিনিময়ে টোকেন দেওয়া হচ্ছে না। অনেকেরই বক্তব্য, তাঁরা ইউপিআই ব্যবস্থার কাউন্টারে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়ানোর পরে এই বিষয়টি জানতে পারছেন। তখন আবার তাঁদের এসে সাধারণ কাউন্টারে দাঁড়াতে হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে মেট্রো সফর হয়তো আধ ঘণ্টার, সেখানে ২০ থেকে ২৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে স্রেফ টোকেন কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে।

শুধু তা-ই নয়। হয়রানি হচ্ছে ইউপিআই ব্যবস্থার কাউন্টারেও। সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে নির্দিষ্ট যন্ত্রে এক বারে একটি টোকেনের টাকাই মেটানো যায়। ফলে, কারও তিন বা চারটি টোকেনের দরকার হলে তাঁকে প্রতি বার কিউআর কোড স্ক্যান করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভূগর্ভস্থ একাধিক স্টেশন ছাড়াও অন্য বেশ কিছু স্টেশন চত্বরে দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা। তাতে কোড স্ক্যান হতে সময় লাগছে। যাত্রীদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, এর চেয়ে অতীতে মেট্রোর ‘এগজ়্যাক্ট ফেয়ার’ (যথাযথ ভাড়া) কাউন্টারের কার্যকারিতা অনেক বেশি ছিল। তাতে অন্তত এত ঝক্কি ছিল না।

পাশাপাশি, মেট্রোর কর্মী সংগঠনের অভিযোগ, নতুন ব্যবস্থায় লেনদেন বাড়াতে কর্মীদের উপরে চাপ দিচ্ছেন কর্তাদের একাংশ। কোনও স্টেশনে ইউপিআই লেনদেনের পরিমাণ কমে গেলে সেখানকার কর্মীকে শাস্তির কোপে পড়তে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩০ কোটি লোক ইউপিআই ব্যবহার করেন। যা ২৫ শতাংশেরও কম। সেখানে এই প্রযুক্তিকে কেন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, প্রযুক্তিতে সড়গড় নন এমন যাত্রীদের হয়রানি বাড়িয়ে তাঁদের পরোক্ষে পরিষেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য ইউপিআই-এর সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত। কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, গত ১ থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে দক্ষিণেশ্বর, বরাহনগর, হাওড়া, হাওড়া ময়দান, এসপ্লানেডের মতো একাধিক স্টেশনে ২৫ শতাংশ যাত্রী এই ব্যবস্থায় টিকিট কেটেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের খুচরো দিতে হচ্ছে না। ফলে কাউন্টারে টিকিট কাটার ব্যবস্থা অনেক মসৃণ হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Metro Metro Tickets Metro Services UPI

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}