বিপত্তি: আলো-আঁধারিতে ভাল করে নজরে আসে না পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনের অংশ। নিজস্ব চিত্র
গত শনিবার পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে যে নতুন এসি রেকে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেটির গার্ড এবং চালকের বয়ানে ওই স্টেশনের কিছু সমস্যার কথা উঠে এসেছে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। উল্লেখ্য, একমাত্র পার্ক স্ট্রিটে ডাউন প্ল্যাটফর্মের (কবি সুভাষগামী) মাঝ বরাবর যাত্রীদের ঢোকা এবং বেরোনোর জন্য অনেকগুলি গেট পাশাপাশি রয়েছে। অভিযোগ, ট্রেন এসে দাঁড়ানোর পরে, বিশেষত ব্যস্ত সময়ে বেরোনোর জন্য প্রায়ই আড়াআড়ি ভাবে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। যা মাঝেমধ্যেই চলে আসে প্ল্যাটফর্মের ধারে ট্রেনের কামরার কাছাকাছি। ফলে যাত্রীদের ওঠা-নামা সম্পূর্ণ হয়েছে কি না, তা বুঝতে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয় চালক ও গার্ডকে।
ওই প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে একটি সিসি ক্যামেরার মনিটর রয়েছে। সেখান থেকেই পুরো প্ল্যাটফর্ম দেখতে পাওয়ার কথা। ট্রেন ছাড়ার অ্যালার্ম বাজানোর আগে গার্ড ওই মনিটরে চোখ রাখেন। কিন্তু অভিযোগ, তা সত্ত্বেও সব সময়ে খুব স্পষ্ট ভাবে প্ল্যাটফর্মের ছবি দেখা যায় না। এই অসুবিধাগুলির কারণে আগেও যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত বলে মেট্রোকর্মীদের একাংশ মনে করছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কানেও তুলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, সে ভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে লাইনের দু’পাশে আপ ও ডাউন প্ল্যাটফর্ম। মাঝে মেট্রো চলাচলের পথ থাকায় ওই অংশে তেমন আলো নেই। সে কারণে প্রায়ই প্ল্যাটফর্মের সিসি ক্যামেরায় সামনের দিকের কামরাগুলির ছবি ঠিক মতো দেখা যায় না বলে অভিযোগ। ড্যাশবোর্ডে দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্কেত পাওয়ার পরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনুমানের উপরে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যা একেবারেই কাম্য নয় বলে দাবি করেছেন মেট্রোচালকদের একাংশ। পাশাপাশি, একেবারে শেষ মুহূর্তে কোনও যাত্রী ট্রেনের সামনের দিকের কামরায় ওঠার চেষ্টা করছেন কি না, তা-ও গার্ডের পক্ষে দেখা কঠিন। কারণ, যাত্রীদের বেরোনোর সেই আড়াআড়ি লম্বা লাইন। অভিযোগ, দুর্ঘটনার দিনেও ওই যাত্রী শেষ মুহূর্তে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন।
এত দিন পার্ক স্ট্রিটের দুই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকার মুখে সামনের দিকে আরপিএফের কোনও কর্মী থাকতেন না। তাঁদের দেখা যেত ট্রেনের শেষ প্রান্তে, অর্থাৎ প্ল্যাটফর্মের পিছনের দিকে। তবে, শনিবারের দুর্ঘটনার পর থেকে প্ল্যাটফর্মের সামনের দিকে রক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গেটের সামনে ভিড় আটকাতে এবং প্ল্যাটফর্মের হলুদ সীমারেখার ধারে যাত্রীদের ঘোরাফেরা ঠেকাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ তৎপর হচ্ছেন বলে খবর।
মেট্রোচালকদের একাংশের অভিযোগ, পার্ক স্ট্রিট ছাড়াও বাঁকের মুখে থাকা আরও কয়েকটি স্টেশনের ক্ষেত্রে যাত্রীদের ওঠা-নামা সম্পূর্ণ হয়েছে কি না, তা বুঝতে তাঁদের ও মোটরম্যানদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। ওই স্টেশনগুলির মধ্যে রয়েছে চাঁদনি চক, শোভাবাজার, কবি নজরুল এবং
শহিদ ক্ষুদিরাম। চাঁদনি চক এবং শোভাবাজার বাঁকের মুখে হওয়ায় সিসি ক্যামেরার ছবি দেখা ছাড়াও কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা বাড়তি সতর্কতা নেন। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে যাত্রীদের ওঠা-নামা সম্পূর্ণ হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই তাঁরা হাত তুলে বাঁশি বাজিয়ে চালককে সঙ্কেত দেন। অন্যত্র সে ভাবে ওই ব্যবস্থা নেই। তবে শনিবারের পরে আরপিএফের সতর্কতা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। যদিও তা কত দিন থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীদেরই একাংশ।
দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে গত শনিবারই চালক ও গার্ডের বয়ান নথিভুক্ত করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, আপাতত ওই তাঁদের ট্রেন চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
মেট্রো সূত্রের খবর, কোন পরিস্থিতিতে সে দিন চালক ও মোটরম্যান ট্রেন ছেড়েছিলেন তা খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারী আধিকারিক। প্রয়োজনীয় সতর্কতা কী ভাবে নেওয়া হয়েছিল, যন্ত্রের ত্রুটি ছিল কি না— সে সবও দেখা হবে রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের তদন্তে। দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে প্ল্যাটফর্মের অবস্থা কী ছিল জানতে বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করার পাশাপাশি ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির রেকটিকে পরীক্ষা করে তার দরজা বন্ধ হওয়ার সময়ের তথ্যও সংগ্রহ করবেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার (মেট্রো সার্কল) জনককুমার গর্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy