ফাইল চিত্র।
এ শহরের বেশির ভাগ স্কুলেরই নিজস্ব বাস নেই। তাই সেই সমস্ত স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা নিজেরাই স্কুলবাস বা ছোট ছোট গাড়ি ঠিক করে ছেলেমেয়েদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অভিভাবকদের ঠিক করা ওই সমস্ত বাস বা ছোট গাড়ির ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ভিতরে ফার্স্ট এড বক্স বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের মতো ন্যূনতম সুরক্ষা-সরঞ্জামও থাকে না। এমনকি, ওই সমস্ত বাস বা গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটও ঠিকঠাক থাকে না বলে অভিযোগ। অভিভাবক এবং বাস কর্তৃপক্ষ— এ ক্ষেত্রে দু’তরফেরই গাফিলতি দেখা যায়।
সোমবার হোলি চাইল্ড স্কুলের যে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেটিরও পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই বাসটিও স্কুলের নিজস্ব বাস নয়। অভিভাবকদের ঠিক করা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বাসটির ব্রেক ফেল করাতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশের অভিযোগ, ওই বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, বাসটি আদৌ চলার উপযুক্ত কি না, তার নিয়মিত পরীক্ষা হত কি? এ বিষয়ে বাসমালিক গৌতম রক্ষিতকে ফোন করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি। মেসেজেরও কোনও উত্তর দেননি।
অভিভাবকেরা যদি কোনও বাস ঠিক করেন, তা হলে সেই বাস চলার উপযুক্ত কি না, তা দেখে নেওয়ার প্রাথমিক দায়িত্বও কিন্তু তাঁদেরই। এমনটাই মনে করেন লা মার্টিনিয়ার স্কুলের সচিব সুপ্রিয় ধর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলেরও নিজস্ব বাস নেই। অভিভাবকেরাই নিজেদের গাড়ি বা ভাড়ার গাড়িতে ছেলেমেয়েদের পাঠান। গাড়ির ফিটনেস নিয়ে যাতে কোনও আপস করা না হয়, সে ব্যাপারে আমরা অভিভাবকদের মাঝেমধ্যেই সচেতন করে দিই।’’
নিজস্ব বাস নেই ক্যালকাটা গার্লসেরও। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাসগুলি আমাদের স্কুলের না হলেও আমরা বাসচালকের নম্বর রেখে দিই। বাসে মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্ট আছেন কি না, তা-ও খেয়াল রাখি। তবে বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব কিন্তু অভিভাবকদেরই।’’ বেথুন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীও বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষিকাদের মিটিংয়ে আমরা স্কুলগাড়ির বিষয়ে সব সময়ে সচেতন করি।’’
ভাড়ার বাসের মালিকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কনট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের বাসগুলির ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কি না, তা নিয়মিত দেখা হয়। ওই সার্টিফিকেট থাকলে তবেই আমরা সেই বাসকে স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিই। তবে সোমবার যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই বাসটি আমাদের সংগঠনের কোনও সদস্যের নয়।’’ তবে হিমাদ্রিবাবু স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘এ শহরে পারমিট ও ঠিকঠাক কাগজপত্র ছাড়া স্কুলবাস চালানোর অভিযোগ মাঝেমধ্যেই ওঠে। পুলিশ বা পরিবহণ দফতর নিয়মিত অভিযান চালালে এই সমস্যা থাকে না।’’ পরিবহণ দফতর ও পুলিশের দাবি, এই অভিযান নিয়মিত চলে। কাগজপত্র ঠিকঠাক না থাকলে কেস দেওয়া হয়। গাড়ি চলতে দেওয়া হয় না।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কি ঠিক তেমনই? ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কি না, তা দেখার জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হয় কি? এ দিনের দুর্ঘটনার পরে ওই স্কুলের কয়েক জন অভিভাবক জানান, চালক যাতে বেপরোয়া ভাবে বাস না চালান, তার জন্য মাঝেমধ্যেই তাঁরা বাসমালিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট যাতে রাখা হয়, তা-ও দেখতে বলেছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy