Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Poolcar

শুধু সুরক্ষায় নয়, স্কুলগাড়ির দূষণেও নজর অভিভাবকদের

ট্র্যাফিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী যানবাহনের ধোঁয়ার মাধ্যমে দূষণে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে উঠে এসেছে কলকাতা।

নজরে: একটি স্কুলগাড়িতে উঠছে পড়ুয়ারা। সোমবার, দরগা রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নজরে: একটি স্কুলগাড়িতে উঠছে পড়ুয়ারা। সোমবার, দরগা রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:১৬
Share: Save:

যানবাহনের ধোঁয়ার মাধ্যমে দূষণের নতুন ‘হটস্পট’ এখন কলকাতা। সেই দূষণ থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে চাইছেন অধিকাংশ অভিভাবকই। সন্তানদের স্কুলে যাতায়াতের মাধ্যম ব্যক্তিগত গাড়িই হোক কিংবা স্কুলবাস-স্কুলগাড়ি, তা দূষণ ছড়াচ্ছে কি না, তা-ও খেয়াল রাখছেন উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা।

স্কুলবাস বা স্কুলগাড়িতে সন্তানদের পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা কী ভাবছেন, তা জানতে সমীক্ষা করেছিল খড়্গপুর আইআইটি। পড়ুয়াদের যাতায়াতের মাধ্যম স্কুলবাস বা স্কুলগাড়ি হতে পারে কি না এবং সে ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কী কী করতে হবে, তা নিয়েই হয়েছিল ওই সমীক্ষা। গত ডিসেম্বরে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়ে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তা, কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের সহযোগিতায় করা ওই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, শহরের দূষণ-চিত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।

ওই সমীক্ষার অংশ হিসেবে স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ি নিয়ে মনোভাব জানতে প্রথম দফায় শহরের একাধিক স্কুলের ১২ হাজার অভিভাবকের কাছে প্রশ্নমালা পাঠানো হয়েছিল। উত্তর আসে ৭,২২১টি। তার মধ্যে ৫,৯২৯টি উত্তর সমীক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। দ্বিতীয় দফায় আরও প্রশ্ন পাঠানো হয় এবং এর উপরে ভিত্তি করেই তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়।

সমীক্ষায় যাতায়াতের মাধ্যমকে স্কুলবাস ও স্কুলগাড়ি— এই দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। কারও ব্যক্তিগত গাড়ি আছে কি না, তার উপরে ভিত্তি করে অভিভাবকদেরও দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলবাস বা স্কুলগাড়ির ক্ষেত্রে সুরক্ষা, নিরাপত্তা, স্কুলবাসকর্মীর আচরণ, যাত্রার সময়, স্বাচ্ছন্দ্য-সহ একাধিক বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। সেই সঙ্গে সেই গাড়ি দূষণ ছড়াচ্ছে কি না, তা-ও নজরে রাখছেন তাঁরা। সন্তানকে স্কুলবাস বা স্কুলগাড়িতে তুলে দেওয়ার আগে তার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র আছে কি না, তা দেখে নেওয়ার পক্ষপাতী অধিকাংশ অভিভাবক।

ট্র্যাফিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী যানবাহনের ধোঁয়ার মাধ্যমে দূষণে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে উঠে এসেছে কলকাতা। এর অন্যতম কারণ ১৫ বছরেরও বেশি পুরনো গাড়ির ব্যবহার। যা বন্ধ করতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের একাধিক নির্দেশ ছাড়াও ধারাবাহিক ভাবে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ।

যাঁর নেতৃত্বে ওই সমীক্ষাটি হয়েছিল, খড়্গপুর আইআইটি-র সেই অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র বলছেন, ‘‘দূষণ তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে স্কুলবাস, স্কুলগাড়ি চালানোর জন্য চালক ও সহযোগী কর্মীদের আলাদা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কারণ অন্য গাড়ির সঙ্গে স্কুলবাস বা স্কুলগাড়িকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। সে সব সুপারিশও করা হয়েছে।’’ ধোঁয়ার দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক প্রীতম আইচের বক্তব্য, ‘‘স্কুলগাড়ির থেকে স্কুলবাসে যাতায়াত ভাল বলে মনে করি। কারণ স্কুলবাসে অনেক পড়ুয়া একসঙ্গে যেতে পারে। তাই রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমে, দূষণও কমে। স্কুলগাড়ির তুলনায় স্কুলবাস অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।’’

আইআইটি-র সুপারিশ অনুযায়ী কি দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে? ভার্গববাবু বলেন, ‘‘স্কুলবাস বা পুলকারের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) তৈরি করছে রাজ্য। আমাদের সমীক্ষা সেই এসওপি তৈরি করতে সাহায্য করবে বলেই আশা করছি।’’ কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক রূপেশ কুমার এ বিষয়ে

বলেন, ‘‘কোনও এলাকার একাধিক পড়ুয়া যদি একই স্কুলে পড়ে, সে ক্ষেত্রে তারা যাতে একটি গাড়িতে স্কুলে আসে, সেই ব্যবস্থা চালুর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Poolcar Air Pollution Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE