অনাবিল: গরমের ছুটির পরে স্কুলে ফেরার উচ্ছ্বাস পড়ুয়াদের মধ্যে। সোমবার, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ
আর যেন তর সইছিল না। গেট খোলার সময় সকাল ১০টা ৪৫। কিন্তু তার বেশ কিছু ক্ষণ আগে থেকেই স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের ভিড়। গেট খুলতেই বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মতো ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ল তারা। শিক্ষকদের কেউ কেউ পড়ুয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলেন। শুরু হল প্রার্থনা। তার পরে ক্লাস শুরুর ঘণ্টা পড়তেই স্কুল ফিরে গেল পুরনো ছন্দে।
স্কটিশ চার্চের মতো ‘চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া’র (সিএনআই) অধীনস্থ ১৫টি স্কুল সোমবার থেকে খুলে গেল। কলকাতার বিশপ পরিতোষ ক্যানিং জানিয়েছেন, আবহাওয়ার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বর্ষা চলে এসেছে রাজ্যে। তাই ‘চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া’র অধীনস্থ স্কুলগুলি খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ দিন সিএনআই-এর অধীনে থাকা লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ় এবং গার্লস, প্র্যাট মেমোরিয়াল, সেন্ট জেমস, সেন্ট জনস্ ডায়োসেশন ও সেন্ট টমাসের সব ক’টি শাখা-সহ বেশির ভাগ স্কুলই খুলে গিয়েছে। এর পাশাপাশি, মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস, দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন-সহ অন্যান্য কিছু বেসরকারি স্কুলও খুলেছে এ দিন। আজ, মঙ্গলবার ও কাল, বুধবার আরও কিছু বেসরকারি স্কুল খুলে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আজ, মঙ্গলবার খুলছে দোলনা ডে স্কুল, বিডিএম ইন্টারন্যাশনাল-সহ বেশ কিছু স্কুল। বুধবার খুলছে রামমোহন মিশন হাইস্কুল।
দীর্ঘ গরমের ছুটির পরে শুধু পড়ুয়াদের মধ্যেই নয়, ছেলেমেয়েদের ছাড়তে আসা অভিভাবকদের মধ্যেও ছিল খুশির আমেজ। তাঁরা জানালেন, ১৬ তারিখও স্কুল খোলা যাবে না বলে সরকারি নির্দেশ যখন এল এবং বেসরকারি স্কুলগুলিও জানাল যে, নির্দেশ মেনে তারাও ২৭ জুন স্কুল খুলবে, তখন তাঁদের ছেলেমেয়েরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাঁদের মতে, স্কুল তো শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়। খেলাধুলো, বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব, কত কিছুই তো হয় সেখানে। সে সব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে থাকতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল অনেকেই। দেবলীনা দাস নামে এক অভিভাবক বললেন, “গত কয়েক দিন ধরে তো বর্ষার বৃষ্টিই হচ্ছে। আবহাওয়া এমন হলে স্কুল আগে খুলবে না কেন? স্কুলগুলি সিদ্ধান্ত বদল করে ২৭ তারিখের আগে খুলে দেওয়ায় আমরা খুব খুশি।”
বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষেরাও মনে করছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিচার করে আগে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত ঠিক। সরকারি স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকেরাও মনে করছেন, তাঁদের স্কুলও ২৭ জুনের আগে খুলে দেওয়া উচিত। ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বললেন, “খুব গরম দেখে গরমের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কিন্তু তার পরে যখন রাজ্যে বর্ষা চলে এসেছে, তখন কেন সিদ্ধান্ত পাল্টে স্কুল আগে খোলা হচ্ছে না? কেন ছুটির জেদ ধরে থাকা হচ্ছে? প্রশাসনের এই জেদের সামনে পড়াশোনাও গৌণ হয়ে যাচ্ছে কেন? কেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে গরমের ছুটি কমানোর কথা ভাবা হল না? সিএনআই-এর স্কুল খুলবে, কিছু বেসরকারি স্কুল খুলবে আর আমাদের সরকারি স্কুল, যেখানে সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারা পড়ে, সেই সব স্কুল বন্ধ থাকবে কোন যুক্তিতে?” শিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy