কৌস্তুভ রায়।
জন্মদিনের পরের দিন ‘ব্রেন স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হয়েছিলেন পরিবারের ছোট ছেলে। রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়। সবার মাঝে জড়িয়ে থাকবে সেই ছোট ছেলের স্মৃতি, এই ভেবেই অঙ্গদানে সম্মতি জানাল কসবার রায় পরিবার। ২৮ বছরের যুবক কৌস্তুভ রায়ের হৃৎপিণ্ড পেলেন হুগলির বাসিন্দা পঞ্চান্ন বছরের এক প্রৌঢ়া। দাতার যকৃৎ পেয়েছেন হাওড়ার মালিপাঁচঘরার বাসিন্দা ৪৮ বছরের এক ব্যক্তি।
গত বৃহস্পতিবার দোকান থেকে ফেরার পরে রাতে আচমকা শরীরের বাঁ দিকের অংশ বেঁকে গিয়ে মুখ থেকে লালা ঝরতে থাকে কৌস্তুভের। তাঁর দাদা রাহুল রায় জানান, আধ ঘণ্টার মধ্যে ভাইকে রুবি হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। কিন্তু তত ক্ষণে মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়েছিল তাঁর। পারিবারিক বন্ধু বিষ্ণুব্রত ঘোষ জানান, বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন কৌস্তুভের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। শুক্রবার সকালে মাথার মধ্যে জমে থাকা রক্ত বার করতে যুবককে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ অস্বাভাবিক থাকার জন্য অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেননি চিকিৎসকেরা। শনিবার রাতে কৌস্তুভের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। যুবকের যে বাঁচার আশা ক্ষীণ তা পরের দিন জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। এর পরেই অঙ্গদানের মাধ্যমে কৌস্তুভের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সক্রিয় হন দাদা। মৃত্যুর পরেও ভাই অনেকের মধ্যে বেঁচে থাকবে, সে কথা পরিবারের সদস্যদের বোঝান তিনি। বড় ছেলের প্রস্তাবে সম্মতি দেন মৃতের বাবা-মা।
বেসরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার রূপশ্রী আগরওয়াল জানান, উচ্চ রক্তচাপের রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মাত্র ২৮ বছর বয়সে পরিবারের ছোট ছেলে ‘ব্রেন ডেথে’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন জানার পরে অঙ্গদানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে নজির তৈরি করেছেন মৃতের পরিজনেরা। পরিবারের সম্মতি মেলার পরে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ এবং ত্বক এসএসকেএমে যাবে বলে ঠিক হয়। অল্পবয়সি যুবকের ‘ব্রেন স্ট্রোক’ প্রসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের স্নায়ু শল্য চিকিৎসক প্রসন্ন এ ভি-র প্রাথমিক ধারণা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণ উচ্চ রক্তচাপ। কৌস্তুভের পরিবার সূত্রের খবর, গত আড়াই বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও কৌস্তুভ নিয়মিত ওষুধ খেতেন না।
এ দিন মৃতের দাদা রাহুল বলেন, ‘‘হাসপাতালে যাওয়ার পথেও ভাই দীপাবলিতে আনন্দ করার কথা বলছিল। স্ট্রোকের পরে মুখের বাঁ দিক বেঁকে গিয়েছিল। সে দিকের হাত-পা নাড়াতে পারছিল না। হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে সেই যে জ্ঞান হারাল আর ফিরল না। ভাইকে বাড়িতে ফেরাতে পারলাম না সেই আক্ষেপ থাকবে। তবুও অনেকের মধ্যে কৌস্তুভ বেঁচে থাকবে ভেবে ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy