এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা...” আর একটা? না অনেক, অগণিত? কে তাদের হিসাব রাখে, শহরবাসী? পুর প্রশাসন? কবি? এঁরা সকলেই, এবং অবশ্যই সেই শিল্পীরা, যাঁরা এই মহানগরকে ক্রমাগত দেখে চলেন তাঁদের শিল্পোপকরণের আয়নায়, অতীত থেকে বর্তমানে। রাজীব দে-র মতো আলোকচিত্রী যেমন বলবেন, গত দুই দশকেই এ শহরের অনেক কিছু বদলে গিয়েছে, আবার স্থির হয়েও রয়েছে অনেক কিছু। বিবর্তন ও অপরিবর্তনের যুগপৎ সহাবস্থানের নামই কলকাতা— তাঁর ক্যামেরার সিদ্ধান্ত।
নাগরিক যেখানে প্রায়-বিকারহীন দেখে যান শহরের চালচিত্র, শিল্পী সেখানে মন্তব্য করেন চিত্রশিল্প কবিতা গদ্য আলোকচিত্রে। চন্দননগরের ভূমিপুত্র রাজীব তাঁর হাসলব্লাড অ্যানালগ প্যানোরামিক ক্যামেরা আর ইলফোর্ড ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফিল্ম-মাধ্যমে গঙ্গার এ পারের কলকাতাকে খুঁজছেন গত কয়েক দশক ধরে। জমেছে শত শত আলোকচিত্র, তাদেরই মধ্য থেকে বেছে নেওয়া কিছু ছবিতে সেজে উঠেছে একটি বই, কলকাতা: মাই এন্ডলেস সিটি (প্রকা: পেনপ্রিন্টস)। ছবি নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবু তার ভিতরকথা কেউ যদি দু’কলম লিখে দেয়, সে হয়ে ওঠে সর্বাঙ্গসুন্দর। রাজীবের ছবির সঙ্গে এই বইয়ে যোগ্য সঙ্গত করেছেন অরূপ ঘোষ, এক-একটি ছবির নীচে পরিমিত ইংরেজি ভাষ্যে।
কী বলে এই ছবিরা? প্রচ্ছদের ছবিতে নতুন শহর ‘নিউ টাউন’ ফুঁড়ে মাখন পিচরাস্তা, কোথাও মাথাচাড়া দিচ্ছে আকাশছোঁয়া বহুতল, আকাশে শেষ বিকেলের আলো, হেঁটে ঘরে ফিরছেন চার নারী। বা পশ্চাৎপ্রচ্ছদ: দূরে হর্ম্যরাজির প্রেক্ষাপটে হঠাৎ ম্যাজিকের মতো ফোরগ্রাউন্ড ফুঁড়ে উদয় হয় খেজুরগাছ আর তাতে হাঁড়ি বাঁধা শিউলি, আলোআঁধারিতে ঢাকা। আশ্চর্য লাগে যখন তার ঠিক নীচের ছবিতেই দেখা যায় শহরের আধুনিক পার্কে স্থাপিত ভাস্কর্য, যেন রদ্যাঁ-র ‘দ্য থিঙ্কার’, চার পাশে তুমুল নাগরিক হইহল্লার মধ্যে একা, চিন্তারত।
ছবিগুলো জোড়ায় জোড়ায় ভাবা। দুই পাতার দুই ছবি রসের দিক থেকে কখনও বিপরীতধর্মী, কখনও পরস্পরকে দেয় বিস্তার, গভীরতা। ময়দানে শীতসকালে পাতার স্তূপে জেগে থাকা মহাবৃক্ষের পাশে নিউ টাউনের খোলা জমিতে শরতের কাশফুল, শহুরে রাস্তায় ডাঁই হয়ে থাকা বাইকের পার্কিং স্টলে ফুলে ফুলে উজ্জ্বল ছাতিমগাছ, বর্ষার হাওড়া ব্রিজে ছাতা-মাথায় ঘরে ফেরা নাগরিক বলে যায় শহরের ইতিকথা। ক্যামেরা নানা ‘মোটিফ’ বেছে নেয়: পায়রা, ছাতা, সাইকেল, রাস্তার ফলক, নদী। এরা সবাই বলে চলে কলকাতার সেই ইতিহাস যার অনেকটা মুছে যাচ্ছে একটু একটু করে, অনেকটা তৈরি হচ্ছে চোখের সামনে। ছবিতে তেমন দু’টি।
শতবর্ষের সাধনা
দেশপ্রিয় পার্কে টেনিস খেলতেন যে মেয়ে, তিনিই আবার কংগ্রেসের অধিবেশনে গান বন্দে মাতরম্, সোদপুরের আশ্রমে গান শোনান মহাত্মা গান্ধীকে। আনন্দময়ী মায়ের সান্নিধ্য মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের (ছবি)। গান তথা কীর্তন তাঁর কাছে সাধনা, গীতশ্রী গায়িকা বলতেন: সাধনাই শেষ কথা, তার বাইরে গান কিচ্ছু নয়! রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কীর্তনের স্থিরা-ধীরা শিক্ষকের গান শেখার ইতিহাসও বিপুল: গরানহাটি মনোহরশাহী কীর্তন যেমন, তেমনই শিখেছেন খেয়াল ঠুংরি ধ্রুপদ ধামার বাউল ভাটিয়ালি, দ্বিজেন্দ্রলাল অতুলপ্রসাদ রজনীকান্ত নজরুল; ‘আপন’ সময়ে কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কীর্তনাঙ্গ, পূজা পর্যায়ের গান। ১৯২৪-এ জন্ম, এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। গানে কথায় তারই উদ্যাপন ছবি বন্দ্যোপাধ্যায় শতবর্ষ স্মরণ কমিটি ও টেগোর সোসাইটি কলকাতার, আগামী ৯ মার্চ শনিবার রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার গোলপার্কের শিবানন্দ হল-এ দুপুর ৩টে থেকে।
সম্ভার
এক সঙ্গে বসে ওঁরা নেন ফোটোগ্রাফির পাঠ। তারই পাশাপাশি আয়োজন করেন ফোটো ট্যুর, কর্মশালা, আলোচনাসভা। ‘ইনার আই স্কুল অব ফোটোগ্রাফি’র বয়স খুব বেশি নয়, কিন্তু তার সদস্যদের যূথবদ্ধ উদ্যোগগুলি অন্য রকম, নজরকাড়া। এ বার বসন্তের কলকাতায় এই আলোকচিত্র-চর্চাকারী গোষ্ঠী নিয়ে এসেছে প্রথম প্রদর্শনী ‘রিপলস ২০২৪’। গ্যালারি গোল্ডে গতকাল শুরু হয়েছে, চলবে আগামী কাল, ৩ মার্চ পর্যন্ত, দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা। কর্ণধার শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে মোট উনিশ জন শিল্পীর ছবি: বিষয় নিসর্গ, ভ্রমণ, বন্যপ্রাণ, জনজীবন। ছবির মধ্য দিয়ে আলোকচিত্রীদের শিল্পসৃষ্টির ধরন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দানই লক্ষ্য।
নারীর মঞ্চ
থিয়েটারকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন আজকের নারীরা। তাঁদের সম্মান জানাতে প্রতি বছর ‘নারীর মঞ্চ উৎসব’ আয়োজন করে নাট্যদল নান্দীপট। শুধু নারীদেরই মঞ্চ, তাঁরাই দর্শকের সামনে পেশ করেন নানা প্রযোজনা; সমাজ ও থিয়েটারের সম্পর্ক ফুটে ওঠে সে ভাবনায়। পঞ্চদশ বর্ষে উৎসব শুরু ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় গিরিশ মঞ্চে, প্রথম পর্বে ৮-১০ মার্চ চার্বাক নাট্যদলের চরণে সেবা লাগে, খেয়ালী দস্তিদারের পরিচালনায়; সোহাগ সেনের নির্দেশনায় অনসম্বল-এর ভীতি আর সীমা মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় রংরূপ-এর মানময়ী গার্লস স্কুল। দ্বিতীয় পর্ব তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে, ১১-১৩ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খুড়িমা, পার্শ্বচরিত্র, একটু আগুন দে, পত্নী ও প্রেয়সী, সাদা সাদা কালা কালা, আমি মাধবী বলছি নাটকগুলি। রয়েছে আলোচনাও; সম্মানিত হবেন অদ্রিজা দাশগুপ্ত ও মুরারি রায়চৌধুরী।
রজতজয়ন্তী
গাছগাছালি পাখপাখালিতে ভরা কলকাতার পর্ণশ্রী। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে আসা কিছু মানুষ ঠাঁই নেন সেখানে, তৈরি হয় রাস্তা, স্কুল-কলেজ। ভাল থাকার জন্য জরুরি সাহিত্য সংস্কৃতি-চর্চাও, সেই অনুভব থেকে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক অমরনাথ করণ ও দিলীপ মজুমদার গড়ে তোলেন ‘পর্ণশ্রী সাহিত্য সম্মেলন’। প্রথম অধিবেশন ১৯৯৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি অন্নদাশঙ্কর রায়ের সভাপতিত্বে, ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত অজিতকুমার ঘোষ প্রমুখ। তার পর থেকে প্রতি বছর হয়েছে সম্মেলন, এসেছেন সংস্কৃতিজগতের বিশিষ্টেরা; সদস্য অঞ্চলের কয়েকশো মানুষ। সম্মেলনের রজতজয়ন্তী বর্ষে আজ ২৫তম বার্ষিক অধিবেশন বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দিরে।
নব্বই বছরে
ইস্কুলে পাশাপাশি বসতেন যখন, কে জানত, সুমথনাথ ঘোষ আর গজেন্দ্রকুমার মিত্রের বন্ধুতাই পরে কলকাতাকে উপহার দেবে ‘মিত্র ও ঘোষ’ প্রকাশনা সংস্থার! ১৯৩৪-এ শুরু, গোড়ায় ১১ কলেজ স্কোয়ারে, পরে ১০ শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট ঠিকানায়। নিজেরা লিখবেন, বার করবেন ভাল বই, এই স্বপ্নপূরণের পথে একে একে এল ছোটদের জন্য বিজ্ঞানের বই, বিদেশি ও ঐতিহাসিক গল্প; সুরেন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত ও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধগ্রন্থ। ফিরে তাকাতে হয়নি আর। প্রবোধকুমার সান্যাল বিভূতিভূষণ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের বই পাঠকদের উপহার দিয়ে চলেছে এই প্রকাশনা, সুযোগ্য উত্তরসূরি সবিতেন্দ্রনাথ রায় হয়ে আজকের প্রজন্মের হাত ধরে। আগামী ৯ মার্চ নব্বই পূর্ণ করছে বইপাড়ার প্রিয় প্রকাশনা, শতবর্ষ সময়ের অপেক্ষা।
আজও ভাবায়
অভিনয় শেষ হয়েছে, কিন্তু উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু-সহ সব দর্শক স্তব্ধ। কয়েক মুহূর্ত পরে করতালির ঝড়। দিল্লিতে সবাই মন্ত্রমুগ্ধ শম্ভু মিত্রের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী দেখে। বহুরূপী নাট্য সংস্থা এখনকার আলোয় ফিরে দেখতে চায় এ নাটককে (ছবিতে বাঁ দিকে তার দৃশ্য)। দীর্ঘ সময় ধরে দলের কর্ণধার, বিশিষ্ট অভিনেতা নির্দেশক নাট্যকার কুমার রায়ের (ছবি) জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করে বক্তৃতার আয়োজন। আজ, ২ মার্চ বাংলা আকাদেমি সভাঘরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাদশতম কুমার রায় স্মারক বক্তৃতায় ‘রক্তকরবী এখন যে ভাবে ভাবাতে পারে’ বিষয়ে বলবেন বিশ্বজিৎ রায়। পরে আলোচনায় যোগ দেবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘কুমার রায় স্মারক সম্মান’ অর্পণ করা হবে তাঁকে। প্রকাশ পাবে ইন্দ্রপ্রমিত রায়ের বই স্মৃতির আয়নায় কুমার রায়। সঙ্গী ‘কুমার রায় স্মৃতিরক্ষা সমিতি’ও।
ধরে রাখা
ক্ষণিকের শিল্প, ক্ষণেই মিলিয়ে যায়। তবু দুর্গাপুজোর মরসুমে প্রতি বছর জেগে থাকে হা-হুতাশ: প্রতিমা মণ্ডপসজ্জা এবং আনুষঙ্গিক সমস্ত কিছু নিয়ে এই যে এক বিরাট বিপুল কর্মযজ্ঞ, তাকে কি ধরে রাখা যায় না, যেত না? কেউ কেউ ধরে রাখেন নিজেদের ভাবনা ও কাজের ইতিহাস: শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত নিজ উদ্যোগ ও ব্যয়ে বই করেছেন (ছবিতে তাঁর গড়া প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জা, গত বছর পূর্বাচল শক্তি সঙ্ঘে); ভবতোষ সুতারের দুর্গাপুজো শিল্পের ‘হয়ে ওঠা’ ধরে রেখেছে শহরের কোনও ক্লাব, বই করে। ইংরেজিতে তবু আছে কয়েকটি বই, তপতী গুহঠাকুরতার ইন দ্য নেম অব দ্য গডেস মনে পড়তে পারে, কিন্তু বৃৃহদর্থে বাংলা বা বাংলার বই-বাজার কি এ ধরনের বই নির্মাণে তত আগ্রহী? কলকাতার দুর্গাপুজো শিল্পের নির্মাণ তথ্য সংরক্ষণে বইয়ের ভূমিকা নিয়ে জরুরি আলোচনা হয়ে গেল গতকাল ১ মার্চ শিশির মঞ্চে, কারিগর প্রকাশনার উদ্যোগে। বললেন জয়ন্ত সেনগুপ্ত দেবদত্ত গুপ্ত অঞ্জন সেন পার্থ দাশগুপ্ত ভবতোষ সুতার।
আলোজীবন
বারো বছর বয়সে বিয়ে, মাত্র তেরোয় সন্তানের জন্ম। গৃহসহায়িকা হিসাবে কাজের, জীবনসংগ্রামেরও শুরু। পারিবারিক অত্যাচারের চাপে পঁচিশ বছর বয়সে তিন সন্তানের হাত ধরে, স্বামীকে ছেড়ে ট্রেনে চেপে দিল্লি আসেন বেবী হালদার, ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে একই কাজ বেছে নেওয়া। ঘটনাক্রমে মুন্সী প্রেমচন্দের পৌত্র, নৃতত্ত্ববিদ প্রবোধকুমারের বাড়িতে আশ্রয় লাভের সূত্রে শুরু হয় তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায়। প্রবোধের উৎসাহে পড়াশোনা ও লেখালিখি শুরু; বেবীর প্রথম বই আলো-আঁধারি আজ অনূদিত কুড়িরও বেশি ভাষায়, এসেছে বহু সম্মাননা। সায়ন্তন পাবলিকেশনের উদ্যোগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার গোলপার্কে এক অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হলেন লেখিকা। নারীজীবন ও মেয়েদের আত্মজীবনী নিয়ে আলোচনায় বললেন অনিতা অগ্নিহোত্রী, রুশতী সেন-সহ বিশিষ্টজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy