Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Underage Marriage

নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রচারে পঞ্চসায়র থানা

পুলিশ সূত্রের খবর, কেন নাবালিকারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, তা বোঝানো হয় বাবা-মায়েদের। বাড়ির পরিবেশের উপরেও যে অনেক কিছু নির্ভর করে, তা-ও বলা হয় মা-বাবাদের। কেন নাবালিকারা পালিয়ে যায়, সে বিষয়ে অভিভাবকদের মতামতও শুনতে চাওয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

রাতের টহল শেষ করে ভোরে থানায় ঢুকেছেন পুলিশ অফিসার ও তাঁর দলবল। চেয়ারে ভাল করে বসার আগেই ওই অফিসারের কাছে এক দম্পতি এসে হাজির। কাঁদতে কাঁদতে তাঁরা পুলিশকে জানালেন, ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখছেন, নাবালিকা মেয়ে বাড়িতে নেই। তদন্তে নামল পুলিশ। জানা গেল, মেয়েটি পালিয়ে গিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করে নিয়েছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়। উপরের ঘটনাটি সপ্তাহখানেক আগে ঘটেছিল পঞ্চসায়র থানা এলাকায়। যে এলাকা থেকে এ বছরই এখনও পর্যন্ত ন’টি নাবালিকা মেয়ের বিয়ের খবর পাওয়া গিয়েছে। কখনও নাবালিকা মেয়েরা নিজেরাই প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছে। কখনও আবার মা-বাবারা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন তাদের। সেই কারণে এ বার নিজেদের এলাকায় এই ধরনের ঘটনা রুখতে মানুষকে সচেতন করার কাজ শুরু করল পঞ্চসায়র থানা।

‘নাবালিকা বিবাহ সামাজিক অভিশাপ’ নাম দিয়ে শুক্রবার শহিদ স্মৃতি কলোনিতে প্রথম অনুষ্ঠান করেছেন ওই থানা কর্তৃপক্ষ। এলাকার নাবালিকা মেয়েদের অভিভাবকদের ডেকে আনা হয়েছিল সেখানে। থানার ওসি তুষারকান্তি ঘোষ ছাড়াও এলাকার এক সাহিত্যিক, এক চিকিৎসক এবং তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নাবালিকাদের বিয়ে না দেওয়ার পাশাপাশি তারা যাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে না যায়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয় মা-বাবাদের। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা-ও বোঝানো হয় সবাইকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, কেন নাবালিকারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, তা বোঝানো হয় বাবা-মায়েদের। বাড়ির পরিবেশের উপরেও যে অনেক কিছু নির্ভর করে, তা-ও বলা হয় মা-বাবাদের। কেন নাবালিকারা পালিয়ে যায়, সে বিষয়ে অভিভাবকদের মতামতও শুনতে চাওয়া হয়। অনেকেই পুলিশকে কথা দিয়েছেন, ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না তাঁরা। মেয়েদের পড়াশোনা করানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তাঁরা।

ঠিক হয়েছে, পাঁচ-ছ’জন করে অভিভাবকের একটি দল তৈরি করে তাঁদের বোঝানোর কাজ করবেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। অভিভাবকদের পাশাপাশি নাবালিকাদের সঙ্গেও কথা বলবেন পুলিশ এবং সমাজের বিশিষ্টজনেরা। এ সপ্তাহ থেকেই তা শুরু হবে। তাদের কথা শোনার পাশাপাশি কম বয়সে বিয়ে করলে কী কী ঝুঁকি রয়েছে, তা বুঝিয়ে বলা হবে। যে সব এলাকা থেকে নাবালিকাদের বিয়ে সংক্রান্ত অভিযোগ বেশি এসেছে, সেখানে এই ধরনের সচেতনতা শিবির করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও সেখানে থাকবেন।

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া যে উচিত নয়, তা নিয়ে সচেতনতা সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছয়নি। অনেক ক্ষেত্রে আবার বাবা-মায়ের উপরে ক্ষুব্ধ হয়ে নাবালিকা মেয়েরাই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেয়। তাই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে এ নিয়ে প্রচার করা হবে। আগামী দিনে শহরের সর্বত্রই এমন শিবির হওয়ার কথা রয়েছে।’’ রাজ্য সরকার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা রাজ্যে নাবালিকা বিয়ে রোধ করার চেষ্টা করছে৷ আবার কেন্দ্রীয় সরকারও ‘বেটি বাঁচাও’ কর্মসূচি নিয়েছে৷ তা সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে থেমে নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy