Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
international women's day

নীরব লড়াইকে নারী দিবসে পঞ্চায়েত দফতরের সম্মান

এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরাও। লকডাউনের সময়ে বেশ কয়েক জন যৌনকর্মীকে মাছ কাটার কাজে নিয়োগ করেছিল পর্ষদ।

শ্রোতা: সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের অনুষ্ঠান। সোমবার।

শ্রোতা: সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের অনুষ্ঠান। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

ওঁরা কেউ রান্না করে, কেউ জমিতে চাষ করে, কেউ আবার হাতের কাজ করে উপার্জন করেন। কঠোর লকডাউনেও ওঁদের জন্যই চালু ছিল সরকারি হেঁশেল। কেউ আবার যৌনকর্মীর পেশার বাইরেও খুঁজে পেয়েছেন রোজগারের অন্য পথ। এঁরা কিন্তু পাশাপাশি সংসারও সামলান। তবু ওঁদের ভূমিকা কখনও আলাদা করে গুরুত্ব পায় না। সমাজের সেই অনুচ্চারিত মহিলারাই সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পঞ্চায়েত দফতরের সামগ্রিক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের (সিএডিসি) প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিত হয়ে।

ওঁরা কেউ রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের সিএডিসি-র হেঁশেল সামলান, কেউ জমিতে জৈব পদ্ধতিতে আনাজ চাষ করেন, কেউ বা হাতের কাজ করেন। তবে এ দিন ওঁরা ছিলেন বক্তার ভূমিকায়। শ্রোতার আসনে দফতরের পদস্থ আধিকারিক থেকে আমন্ত্রিতেরা।

২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বাসিন্দা সালেহা খাতুনকে বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন বাড়ির লোকেরা। কিন্তু সালেহা বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। স্নাতক পাঠরত সালেহা বিয়ের পরে ভূগোলে অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরে স্নাতকোত্তর ও বিএড পাশ করেছেন। সালেহা এখন হরিহরপাড়ার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রধান। ৯০ জন মহিলাকে নিয়ে সমবায় থেকে ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে জৈব চাষে নেতৃত্ব দেন তিনি। এ দিন সালেহা বলেন, ‘‘শূন্য হাতে শুরু করেছিলাম। পড়াশোনার টাকা ছিল না। স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে কুড়ি জন মহিলাকে নিয়ে ভেষজ চাষ শুরু করি। ছেলেরা বলতেন, মেয়েরা চাষবাস করতে পারবে না। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, দৃঢ়তা আর সদিচ্ছা থাকলে সব হয়। মাসে আমাদের মেয়েদের গড় আয় চার হাজার টাকা।’’ দৃঢ় কণ্ঠে সালেহা বলেন, ‘‘আমি হয়তো চাকরি পেতে পারি। কিন্তু গোষ্ঠীর মেয়েদের ছেড়ে কোথাও যাব না।’’

লকডাউন পর্বে সিএডিসি-র বিভিন্ন জেলার খামার থেকে আনাজ ভর্তি গাড়ি কলকাতায় পৌঁছচ্ছিল। সেই কাহিনি শোনাতে গিয়ে নদিয়ার হরিণঘাটার আভা রায় বলেন, ‘‘আমাদের গোষ্ঠীর মেয়েরাই ভোরে সেই আনাজ গাড়িতে বোঝাই করে সল্টলেকে মজুত করতেন।’’ পঞ্চায়েত দফতরের বিশেষ সচিব তথা পর্ষদের প্রশাসনিক সচিব সৌম্যজিৎ দাস বলে ওঠেন, ‘‘শুনশান লকডাউনে ওঁরা ছিলেন বলেই সল্টলেকের হেঁশেল থেকে রান্না করা খাবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পেরেছি।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরাও। লকডাউনের সময়ে বেশ কয়েক জন যৌনকর্মীকে মাছ কাটার কাজে নিয়োগ করেছিল পর্ষদ। সবিতা দাস (নাম পরিবর্তিত) নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘‘প্রথম দিন বড় ভেটকি মাছ কাটতে গিয়ে খুব বেগ পেতে হয়েছিল। আস্তে আস্তে সব রপ্ত করে নিয়েছি। ইচ্ছা আর দৃঢ়তা থাকলে সব কাজই শেখা যায়।’’ এমন নীরব সংগ্রামকে কুর্নিশ জানাতে প্রেক্ষাগৃহে তখন একটানা হাততালির শব্দ।

আর ওঁদের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে গেলেন চিকিৎসক শুভশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, ইঞ্জিনিয়ার স্বাগতা রায়, বেসরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারিক শ্বেতা সিংহেরা। চোখে বিস্ময়ের ঘোর। বছরের এই একটা দিন স্বীকৃতি পাওয়ায় তৃপ্তির হাসি তখন সালেহা, আভাদের ঠোঁটে।

অন্য বিষয়গুলি:

international women's day State Panchayat department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy