Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Online Class

online classes: স্কুল বন্ধে পিছিয়ে যাচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের লড়াই

টালিগঞ্জের সোমাঞ্জনার ডাউন সিনড্রোম। স্কুল বন্ধ। এখন মায়ের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি কাজ করে তার দিন কাটছে।

লকডাউনের আগে মুকুন্দপুরের একটি কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের এ ভাবেই পড়াশোনা চলত।

লকডাউনের আগে মুকুন্দপুরের একটি কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের এ ভাবেই পড়াশোনা চলত। ছবি: সংগৃহীত

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১৪
Share: Save:

কারও কাছে স্মার্টফোন নেই। কারও ফোন থাকলেও অনলাইনে ক্লাস করানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই। কেউ আবার মানিয়ে নিতে পারছে না অনলাইন মাধ্যমে। করোনাকালে টানা স্কুল বন্ধ থাকায় তাই কলকাতা শহরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা স্কুল এবং নিয়মিত পঠনপাঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

শহরের বিশেষ স্কুলগুলির নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, গত দু’বছরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। অনেক পড়ুয়া অনলাইনে পড়াশোনার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে স্কুল ছেড়েছে। লকডাউনে বেশ কিছু অভিভাবকের রোজগার অনিশ্চিত হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। শিক্ষকদের মতে, সমাজের মূল স্রোতে আসতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা যতটা লড়াই করে এগিয়েছিল, লকডাউন এবং টানা স্কুল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পড়ুয়া তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রান্তিক পরিবারের পড়ুয়ারাও।

টালিগঞ্জের সোমাঞ্জনার ডাউন সিনড্রোম। স্কুল বন্ধ। এখন মায়ের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি কাজ করে তার দিন কাটছে। পড়াশোনা ছেড়ে পাড়ায় ঘুরছে বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী স্বপ্নিল। স্কুলের দিদিমণিরা বাড়ি গিয়ে পড়ার কাজ দিয়ে এলেও মা সেলাইয়ের কাজের ফাঁকে ছেলেকে সময় দিতে পারেননি। স্কুলের কাজ, পড়াশোনা লাটে উঠেছে হরিদেবপুরের বাসিন্দা অটিস্টিক প্রিয়াংশুর। বাড়ির একটাই স্মার্টফোনে ক্লাস চলে দাদা, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শুভ্রর। অভ্রর ডাউন সিনড্রোম, তার অনলাইন ক্লাস এবং থেরাপি— দুই-ই বন্ধ। দক্ষিণ কলকাতার বিশেষ স্কুল ‘পরশমণি’র সম্পাদক চৈতালি গামি বলেন, ‘‘সাধারণ স্কুলে পড়ুয়াদের ট্যাব, মোবাইল দেওয়া হয়েছে। বিশেষ স্কুলে সে সব সুবিধা কোথায়!’’

মুকুন্দপুরের অটিস্টিক কিশোর বিপ্লব দে খেলে ভাল, পড়াশোনাও ভালবাসে। তাই মা চন্দনা দে পরিচারিকার কাজ করেও তাকে স্কুলে পাঠাতেন। লকডাউনের পর থেকে তার পড়া, খেলা, থেরাপিতে ছেদ পড়েছে। চন্দনার কথায়, ‘‘কাজ গিয়েছে। বাড়ি ভাড়াও মেটাতে
পারি না। স্কুলের দিদিদের সাহায্যে ফোন কিনলেও টাকা ভরানোর সামর্থ্য নেই।’’

দমদমের বিশেষ স্কুল ‘উদ্ভাস’-এর শিক্ষক কাকলি কর বলেন, ‘‘বাড়িতে কী ভাবে কোনও কাজ করাতে হবে আমরা অভিভাবকদের বুঝিয়ে দিই। কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা বিষয়টি না বোঝায় সমস্যা হয়। স্কুল থেকে দেওয়া কাজ করাতে না পেরে ক্লাস করানো ছেড়ে দেন।’’ বাইপাসের ধারের শহিদ স্মৃতি কলোনির লক্ষ্মী সাউ বলছেন, ‘‘আগে স্কুলের দিদিরা বুঝিয়ে দিতেন, কোন কাজ কী ভাবে করাতে হবে। হাতের কাজ ফেলে কী করে এ সব নিয়ে বসে থাকি? প্রায়ই ভুল হয়। তাই ছেলের ক্লাস বন্ধ।’’

বিশেষ শিশুদের এ ভাবেই ছেদ পড়ছে বৃত্তিমূলক শিক্ষায়। ‘নোবেল মিশন’-এর অধিকর্তা লীনা বর্ধন বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বসে হাতে-কলমে কাজ করাতে হয়। থেরাপির সময়ে বাচ্চার শরীরী ভাষা, চোখ খেয়াল রাখতে হয়। অনলাইনে তা কি সম্ভব?’’

ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত রায়ও বলছেন একই কথা, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের হাতে ধরে অনেক জিনিস শেখাতে হয়। টানা স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের শেখায় অনেকটা ঘাটতি থেকে গিয়েছে, যা পূরণ হতে বেশ সময় লাগবে। এ জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল খোলা প্রয়োজন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Online Class
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy