সপ্তমীর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া এভারগ্রিনের মণ্ডপের সামনে দর্শনার্থীদের ঢল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
তৃতীয়া আর চতুর্থীর ভিড়কে যদি টেক্কা দিয়ে থাকে পঞ্চমী, তা হলে পঞ্চমীর সেই ভিড়কে পাঁচ গোল দিয়েছে ষষ্ঠী। তবে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সপ্তমীর যে চিত্র দেখা গেল বিভিন্ন মণ্ডপে, তাতে পুরনো বেশ কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে বলেই মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ষষ্ঠীকে ছ’গোল দিয়েছে সপ্তমী। করোনা-পর্বের আগে শেষ কবে এই সংখ্যায় পুজো-জনতা পথে নেমেছিলেন, মনে করতে পারছেন না অনেকেই। ভিড়ের মধ্যে এ-ও শোনা যাচ্ছে, অষ্টমী আর নবমীর ভিড়ের হিসাব করলে তা এই দশকের সব পুজোকে ছাপিয়ে যেতে পারে!
তবে ভিড়ের এই চিত্র সপ্তমীর সকালে ছিল অন্য রকম। দুপুর ৩টে পর্যন্ত পথে গাড়ি চলেছে নির্ঝঞ্ঝাটে। প্রায় কোনও রাস্তাতেই যানজট ছিল না। ওই সময়ে পথে বেরোনো অনেকেরই প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘যেন কোনও ছুটির দিন। রাস্তায় বেশি মানুষ নেই, গাড়িও খুব কম।’’ কিন্তু এই ভাবনা বদলাতে শুরু করে বিকেল গড়াতেই। সেই সময়ে ভিড়ের ঠেলা খেতে খেতে প্রতিমা দর্শনের জন্য এগোনো কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তৃতীয়া থেকে সব হোল নাইট চলছিল। বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। সূর্য ডুবতেই পিঁপড়ের মতো মানুষ বেরিয়ে পড়েছে।’’ সকালে ভিড় ছিল মূলত গঙ্গার ঘাটগুলিতে। পুলিশের হিসাবে, বাবুঘাটের চেয়েও এ দিন বেশি ভিড় ছিল উত্তরের ঘাটগুলিতে। যার প্রভাব পড়েছে বাগবাজার, রবীন্দ্র সরণি এবং ভূপেন বোস অ্যাভিনিউয়ে। নবপত্রিকা স্নান করিয়ে মণ্ডপের পথে যাওয়া পুজোকর্তাদের গাড়ির চাপে তখন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের নাজেহাল অবস্থা। এর মধ্যেই ভিড় জমেছিল ২৬৫ বছরের পুজো শোভাবাজার রাজবাড়ির নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা দেখার জন্য। প্রথা মেনে এ বারও সেখানে চালকুমড়ো বলি হয়।
একই ভাবে প্রথা মেনে পুজো শুরু হয়েছে বনেদি বাড়ি থেকে বারোয়ারি পুজোর। এর মধ্যেই নানা সংস্থার পুরস্কারও ঘোষণা হতে শুরু করেছে। সেই ঘোষণার পরেই এ দিন প্রবল ভিড় চোখে পড়ল উত্তরের টালা প্রত্যয়, টালা বারোয়ারি ও কাশী বোস লেনে। ‘পাচার’ নিয়ে তৈরি কাশী বোস লেনের মণ্ডপ দেখে এক দর্শনার্থী বললেন, ‘‘দু’ঘণ্টা লাইন দিয়ে ঢুকেছি। এমন সুন্দর মণ্ডপ দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা যায়। ভিতরে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে পাচার হওয়া মেয়ের দুর্দশা দেখানো হয়েছে। প্রতিমার কাছে যে মুক্তির আকাশ বানানো হয়েছে, সেটাও অনবদ্য।’’ হাতিবাগান নবীন পল্লিতে একশোয় আবোল তাবোল থিম দেখে আর এক জন বললেন, ‘‘এত ধাক্কাধাক্কি যে, জুতোটা ছিঁড়েছে। কিন্তু এমন মন ভাল করা মণ্ডপ এ বার কমই হয়েছে। আবোল তাবোলের চরিত্রেরা আশপাশে ঘুরছে। পাড়ার বাড়িগুলি সাদা-কালো রং করে থিমের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে।’’
পুজো দেখার একই রকম উদ্দীপনা দক্ষিণের সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী চত্বরে। লকগেট উড়ালপুল ব্যবহার হওয়ায় এ বার চেতলায় যেন ভিড় আরও বেশি। সুরুচির মণ্ডপ দেখে বারাসতের এক দর্শনার্থীর মন্তব্য, ‘‘সন্ধ্যায় উত্তর ঘুরে রাতে দক্ষিণে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, রাতে উত্তরে গেলেই ভাল হত। বহু জায়গায় পা ফেলার অবস্থাও নেই। এ বারও উত্তরকে ভিড়ে গোল দিয়েছে দক্ষিণ।’’ ত্রিধারা সম্মিলনীতে আবার থিম ‘উৎসব’। পাইপ আর আলোর কাজ দেখে মুগ্ধ এক জনের মন্তব্য, ‘‘আগামী ক’দিন বাড়ি বসে খাওয়া-দাওয়া। যত রাতই হোক, বড় পুজোর সব ক’টা দেখে ফিরব।’’
মুখ্যমন্ত্রী বার বার ভিআইপি পাস বন্ধ করার অনুরোধ জানালেও কোনও পুজোই সে পথে হাঁটে না। এ বার পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে বিজেপি নেতার উপস্থিতি। তাঁর কনভয়ের জন্য দীর্ঘক্ষণ বৌবাজারে যান চলাচল ব্যাহত হয়। সন্ধ্যায় আবার ভিড়ের চাপে ওই পুজোয় দর্শক প্রবেশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বিরক্ত এক দর্শনার্থী বললেন, ‘‘লাইনে এত সময় লাগল যে, খাওয়াই হয়নি। তবে মণ্ডপ দেখা ছাড়িনি। মধ্যরাতে ডিনার সেরে নতুন মণ্ডপের দিকে চলেছি।’’ আর তো দু’দিন, কলকাতার ঘুম নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy