বেহাল: জমে আছে জল। চারপাশ ভরেছে আগাছায়। এই পরিবেশেই বাস করছেন নার্সরা। শনিবার, হাওড়ার জয়সওয়াল হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
সরকারি নির্দেশ মেনে হাওড়া পুরসভা এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ‘ডেঙ্গি বিজয় অভিযান’। কিন্তু অভিযোগ, শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কোভিড হাসপাতাল চত্বর ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর হয়ে থাকলেও সেখানে অভিযানের ছোঁয়াটুকু পড়েনি। যে নার্সেরা কোভিড রোগীদের সেবায় ‘কোভিড ওয়ারিয়র’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন, তাঁদের পরিবারকেই প্রতিনিয়ত মানুষ সমান আগাছার জঙ্গল, ১৫ মাস ধরে জমে থাকা পচা জল আর প্রায় ভেঙে পড়া আবাসনে থেকে দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিকার চেয়েও মেলেনি বলেই অভিযোগ। উল্টে শুনতে হয়েছে আবাসন ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি।
উত্তর হাওড়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২৬০ বেডের টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালের সৌন্দর্যায়ন হয় বছরখানেক আগে। মাসখানেক আগে ওই হাসপাতালকেই কোভিড হাসপাতালের রূপ দেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সে জন্য হাসপাতালের কিছু জরুরি পরিকাঠামোর পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু সৌন্দর্যায়ন বা পরিবর্তনের যে কোনও স্পর্শ হাসপাতাল চত্বরে থাকা নার্সদের আবাসন বা সংলগ্ন চত্বরে লাগেনি তা সেখানে গেলেই বোঝা যায়।
হাসপাতালের পশ্চিম দিকে কিছুটা এগোলেই রয়েছে একটি ভাঙাচোরা রাস্তা। যে রাস্তার পুরোটাতেই জমে রয়েছে দীর্ঘদিনের পাঁকজল। সেই কালো দুর্গন্ধে ভরা জল পেরিয়ে এগোলেই শুরু হবে মানুষ সমান উঁচু জঙ্গল। রাস্তা যেখানে সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে। পচা জমা জল আর জঙ্গল পেরিয়ে যাওয়ার পরে পৌঁছনো যাবে নার্সদের আবাসনে।
তেতলা আবাসনটিকে দেখলেই বোঝা যাবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। ছাদ থেকে বড় বড় সিমেন্টের চাঙড় ভেঙে পড়ে লোহার শিক দেখা যাচ্ছে। কয়েক জায়গায় ছাদ ফেটে জল চুঁইয়ে পড়ছে ঘরের ভিতরে। খসে পড়েছে দেওয়ালের পলেস্তারা। আবাসনের দেওয়ালে আগাছার জঙ্গল। আর এই অবস্থাতেই বাস করছে ওই হাসপাতালের নার্সদের সাতটি পরিবার। নোংরা জল পেরিয়ে জঙ্গলপথ দিয়ে সেই আবাসনের সামনে পৌঁছে দেখা যায় ভিতরে সিঁড়ির নীচেও কালো জল জমে রয়েছে। সেই জল এড়ানোর জন্য একটা বড় লম্বা কাঠের পাটাতন ফেলা হয়েছে সিঁড়ির উপরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আবাসনের এক সদস্য বলেন, ‘‘বছরের পর বছর এই ভাবে আমরা রয়েছি। মানুষকে সেবা করার প্রতিদানে এটাই আমাদের প্রাপ্তি। আমরা বার বার জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানাবার পরেও আবাসন মেরামত করা হয়নি। জঙ্গল সাফ করে জমা জল পাম্প করে বার করা হয়নি। ফলে সকলেরই চর্মরোগ হচ্ছে।’’
এক নার্সের আত্মীয় বলেন, ‘‘প্রায় ১৫ মাস ধরে আবাসনে আসার রাস্তায় জল জমে রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বললে আমাদের বলা হয়েছিল আবাসন ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু আমরা সরকারি আবাসন ছেড়ে যাব কোথায়?’’
হাসপাতাল চত্বরে থেকে নার্সিং করার শর্তেই সকলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ওই হাসপাতালে। যাঁরা দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে চাকরি করতে আসেন তাঁদের জন্যই কোয়ার্টার্সের ব্যবস্থা থাকে। আবাসনে থাকা পরিবারগুলির প্রশ্ন, ‘‘তা হলে আমাদের থাকার বিকল্প ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না কেন প্রশাসন। আমাদের ডেঙ্গি হলে হাসপাতালের রোগীদেরও কি হবে না?’’
টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালের নার্সদের আবাসনের এই হাল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘আবাসনটির সংস্কার নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে, কোভিড মোকাবিলা করতে এই সময়ে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই এখন কোনও রকম সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া যাবে না। তবে পুরসভাকে বলব আবাসন সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য।’`
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy