প্রতীকী ছবি।
রাত সাড়ে ন’টার কবি সুভাষগামী মেট্রোয় তখন যাত্রীদের ভিড়। অনেকের সঙ্গেই মেট্রোর দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন জিন্স-টি শার্ট পরা বছর ছাব্বিশের জনা তিন-চার যুবক। কানে গোঁজা ব্লু টুথ। নিজেদের মধ্যে টুকটাক গল্প চললেও চোখ আটকে মোবাইল স্ক্রিনে।
কুঁদঘাট সংলগ্ন নেতাজি স্টেশনে নামার জন্য যাত্রীদের কয়েক জন জমায়েত হলেন দরজার কাছে। ট্রেন থামতেই যাত্রীরাও নামতে থাকেন। আচমকা চিৎকার করে উঠলেন এক তরুণী। নজর পড়ল, তাঁর জিন্সের পকেট থেকে মোবাইল ছিটকে তখন মেট্রোর দরজার কাছে লুটোপুটি খাচ্ছে। কামরার ভিতরের যাত্রীরা কিছু বোঝার আগেই তত ক্ষণে খানিকটা পিছিয়ে গিয়েছে যুবকের দল।
কোনও মতে হাত বাড়িয়ে তরুণী মোবাইল কুড়িয়ে নিতেই চকিতে বন্ধ হয়ে গেল এসি মেট্রোর দরজা। হতভম্ব তরুণী কিছু ঠাহর করার আগেই চলতে শুরু করল মেট্রো। যাত্রীদের অধিকাংশের কাছেই স্পষ্ট নয় ঠিক কী ঘটল। কয়েক জন যাত্রীর কিছু খটকা লাগায় দরজা থেকে সরে আসতে বলেন ওই যুবকদের। কবি নজরুল এবং শহিদ ক্ষুদিরাম আসতেই নেমে যায় ওই যুবকেরা। আপাত নিরীহ এই ঘটনায় বিপদ দেখছেন মেট্রোর যাত্রীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী এক মহিলার কথায়, ‘‘স্পষ্ট দেখেছিলাম, নামার সময়ে ওই যুবকদের এক জন তরুণীর প্যান্টের পকেট থেকে বেরিয়ে থাকা মোবাইলটি টানার চেষ্টা করেছিল। তরুণী আঁচ করে তড়িঘড়ি সেই হাত সরিয়ে নেওয়ায় ফোনটি নীচে পড়ে যায়।’’ কিছু বলেননি কেন? ‘‘ভয়ে। রোজ এই মেট্রোয় যাতায়াত করি। কেউ কিছু না বললে, আমি একা চিহ্নিত হয়ে থাকব।’’ মেট্রো সফর আগের মতো যে নিরাপদ নয় এমনটা মানছেন অনেকেই।
মেট্রো সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে গত কয়েক মাসে এ ধরনের অভিযোগে বেশ কয়েক জন অভিযুক্তকে পুলিশে তুলে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কয়েক মাস আগের ঘটনা। এক যাত্রীর পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করতে গিয়ে ধরা পড়া জনৈক যুবককে হাতেনাতে ধরে রেলরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেন যাত্রীরা। পরে কালীঘাট স্টেশনে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। এসপ্লানেড স্টেশন থেকে মেট্রোয় চুরি বা পকেটমারির ঘটনায় ধৃত বেশ কিছু অপরাধীর ছবিও পুলিশের কাছে রয়েছে। সেই মতো নজরদারিও চলে বলে খবর।
তবে, এ ভাবে মোবাইল বা মানিব্যাগ হাতানোর দল মেট্রোয় নতুন বলে মানছেন কর্তৃপক্ষ। সেখানেই উদ্বিগ্ন যাত্রীরা। রাতের শেষ কয়েকটি মেট্রোয় রেলরক্ষী বাহিনীর কর্মীদের থাকার কথা। কিন্তু সব সময়ে তাঁদের পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ যাত্রীদের। নজরদারির সেই ফাঁক গলেই এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। সারা দেশে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে সম্প্রতি ‘ফেস রিকগনিশন’ ক্যামেরা ছাড়াও বিশেষ সফটওয়্যার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোয় কবে তেমন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে জানেন না কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে রেলরক্ষী বাহিনীর তৎপরতা এখনই বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন যাত্রীরা।
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রাতে মহিলা যাত্রীদের জন্য ট্রেনের কামরায় আরপিএফ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সারাদিন বিভিন্ন সময়ে নজরদারি চালাতে সাদা পোশাকে আরপিএফ কর্মীরা থাকেন। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy