রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
আশির দশকের শেষ পর্বের ঘটনা। মংপঙের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে কালাপাহাড় নামের এক পাগলা হাতি। একের পর এক মানুষ খুন করে চলেছে সে। টানা আট দিন জঙ্গলে পায়ে হেঁটে খোঁজার পর অবশেষে তার দেখা পেলেন কলকাতার দুই শিকারি, চঞ্চল সরকার ও রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়। সন্ধ্যার মুখে জঙ্গলের এক বাঁকে ১১ ফুট ৩ ইঞ্চির সেই গজরাজ তেড়ে এল তাঁদের দিকে। দূরত্ব যখন মাত্র ফুট বিশেক, রাইফেল গর্জে উঠল দু’জনের। বিশাল হাতিটি মুখ থুবড়ে পড়ল কয়েক ফুট দূরে।
এ ভাবে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে পাগলা হাতি মেরে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন কলকাতার বিখ্যাত দুই শিকারি। ৩১টি পাগলা ও খুনি হাতি মেরেছিলেন ওঁরা। এক দশক আগে ‘ভেঙে গিয়েছিল’ সেই জুটি। ২০১৩-য় চলে গিয়েছিলেন চঞ্চল। শুক্রবার রাতে প্রয়াত হলেন রঞ্জিতও। বয়স হয়েছিল ৭৯। শুধু শিকারি নন, প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও রঞ্জিত কাজ করেছেন জীবনভর। তাঁর মৃত্যুতে বাঙালির জঙ্গলচর্চার এক বিশেষ যুগের অবসান ঘটল।
১৯৬৯ সালে ওড়িশার ঢেঙ্কানলে আট ফুট দাঁতালকে মেরে শুরু হয়েছিল চঞ্চল-রঞ্জিতের ‘অভিযান’। শেষ শিকার ২০০৩ সালে ছত্তীসগঢ়ে। ১৯৭৪-এর ১১ জুলাই উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটায় চঞ্চল ও রঞ্জিত মারেন তিনটি পাগলা হাতিকে, একই দিনে। চঞ্চল আদতে ছিলেন সিভিল কন্ট্রাক্টর। নিউ টাউনের বাসিন্দা রঞ্জিত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন গোয়েন্কা গোষ্ঠীর সিইএসসি ভবনের সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান উপদেষ্টা।
সরকারি ভাবে কোনও জঙ্গল বা লোকালয়ে হাতিকে ‘খুনি ও পাগল’ ঘোষণা করা হলে সরকারি নির্দেশে মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষায় হাতিদের মেরে ফেলা হয়। আর সেই কাজ করতে ডাক পড়ে সরকারি প্যানেলে থাকা হাতিশিকারিদের। ষাটের দশকের শেষ পর্ব থেকে সেই সূত্রে বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় সেই খুনি হাতিদের ত্রাসে ইতি টেনেছেন। বহু বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সাহসে ভর করে প্রাণে বেঁচেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy