ধূলিসাৎ: ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নয়ডার সুবিশাল জোড়া বহুতল। রবিবার। ছবি: পিটিআই
নয়ডায় রবিবার দু’টি সুবিশাল বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার ছবি বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষকে একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিল বলেই আমি মনে করি। এই বার্তা আজ কলকাতা তো বটেই, ভারতের প্রতিটি বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্থানীয়, ছোট-বড় প্রভাবশালীর কাছে পৌঁছেছে।
কলকাতা শহরে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নতুন নয়। সকলের চোখের সামনেই চলছে সেই সব কাজ। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি বুজিয়ে, ই এম বাইপাসের ধারের সবুজ নষ্ট করে, নয়ানজুলি বুজিয়ে চলছে নির্মাণ। এই সব নির্মাণের কি আইনি অনুমতি রয়েছে? যদি না থাকে, তা হলে যাঁদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে এই কাজ চলছে, তাঁদের চিন্তার কারণ রয়েছে নয়ডার ঘটনার পরে। কোনও বেআইনি নির্মাণ এক দিনে মাথা তোলে না। স্থানীয় রাজনীতিকেরা তাতে বাহবা দেন, উৎসাহ দেন। যাঁরা বেআইনি নির্মাণ করেছেন, যাঁরা করতে যাচ্ছেন, সকলকে সাবধানবাণী শোনাল আদালত। আর সাধারণ মানুষকে জোগাল সাহস। তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকেন, কারণ তাঁরা ভয় পান। যে ভাবে দীর্ঘ আট বছর লড়াইয়ের পরে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলায় জয় এসেছে, তাতে এ শহরের মানুষও বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জোর পাবেন বলে আমার মনে হয়। আদালত কিন্তু সাধারণ মানুষের শেষ ভরসার জায়গা। সময় লাগলেও সেখানে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্ল্যান পাশ হয়ে যাওয়ার পরে কিছু অনিয়ম হলে জরিমানা নিয়ে সেগুলি ‘লিগ্যালাইজ়’ করে দেয় পুরসভা। এই রায়ের পরে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অনেক বেশি কড়া হওয়ার রাস্তা খুলে গেল পুরসভাগুলির কাছেও। এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনেক মামলায় নয়ডার দৃষ্টান্তকে তুলে ধরা হবে। ওই দু’টি বাড়ির একটি ২৯তলা, অন্যটি ৩২তলা ছিল। এত বড় দু’টি বাড়ি যদি সেখানে ভেঙে ফেলা যায়, তা হলে এ শহরেই বা নয় কেন?
সুপ্রিম কোর্ট শুধু বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে রায় দেয়নি। মাথায় রেখেছে ওই বহুতলে ফ্ল্যাট কেনা সাধারণ মানুষগুলির ক্ষতিপূরণের দিকটিও। একগুচ্ছ সাবধানতা অবলম্বন করে এ দিন ভাঙার কাজটি হলেও কয়েকটি বিষয় নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। যে ধুলোর ঝড় এ দিন সৃষ্টি হল, তার মোকাবিলায় যে পরিমাণ জলের ব্যবহার হল, তাতে পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে, বাড়ি দু’টি ভাঙার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব কোনও উপায় অবলম্বন করা যেত না কি? অথবা, বাড়ির বেআইনি অংশ ভেঙে দিয়ে বাকি অংশ সামাজিক কাজে, গৃহহীনদের জন্য কাজে লাগানোর কোনও ব্যবস্থা করা যেত কি না, সে প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। তবে কিছু প্রশ্ন থাকলেও নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ধ্বংস হল দুর্নীতির অট্টালিকা।
জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, আইনজীবী
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy