Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

এত নৃশংসতা কেন, উত্তর নেই এলাকায়

কেন এমনটা ঘটল, তা নিয়েও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। কেউ বলছেন, মানুষের সহনশীলতা কমে গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৪
Share: Save:

রাতভর মারধর করার পরে এক যুবকের মৃত্যু হল। অথচ এলাকাবাসীরা কেউ কোনও প্রতিবাদ করলেন না! দক্ষিণ দমদমের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে রবীন্দ্রনগর এলাকায় নৃশংস গণপিটুনিতে এক তরুণের মৃত্যু ঘিরে এমনই প্রশ্ন উঠছে।

কেন এমনটা ঘটল, তা নিয়েও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। কেউ বলছেন, মানুষের সহনশীলতা কমে গিয়েছে। কারও আবার বক্তব্য, পুলিশের উপরে ভরসা কমে গেলে এমনটা ঘটার আশঙ্কা থাকে। নিষ্ক্রিয়তার কথা অস্বীকার করলেও গণপিটুনির ঘটনায় প্রশাসনের বেড়েছে উদ্বেগ।

দক্ষিণ দমদমের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পাশাপাশি দুই পাড়া প্রমোদনগর এবং রবীন্দ্রনগর। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, প্রমোদনগর তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়া। মূলত ঘিঞ্জি বস্তি অঞ্চল সেটি। উল্টো দিকে রবীন্দ্রনগরে নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের বসবাস। রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দাদের নৃশংস প্রহারে প্রমোদনগরের তরুণের মৃত্যুকে ঘিরে কার্যত সম্মুখ সমরে এখন দুই পাড়া।

ঘটনার পর থেকে রবীন্দ্রনগরের পরিবেশ রীতিমতো থমথমে। শুক্রবারে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, তিন জন আহত, এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এলাকায় অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। মুখ খুলতে চাননি অনেকেই। তবু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে চুরির উপদ্রব চলছে। অথচ কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। বাসিন্দারা তিতিবিরক্ত এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এই পরিস্থিতিতে কালীপুজোর রাতে একটি বাড়ির ভিতরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিল ওই তরুণ। তাঁকে হাতেনাতে পেয়ে জনরোষ দেখা দেয়।

তাই বলে এতটা হিংস্রতা কী ভাবে দেখা দিল? কেন কোনও বাসিন্দা এসে মারধর আটকে দিলেন না? কারও কি মনে হল না প্রতিবাদ করা দরকার? কেন থানায় ফোন করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হল না ওই তরুণকে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি। তাঁদের একই সাফাই, পরপর চুরি হয়ে যাচ্ছে অথচ পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করে না। এর জেরেই ক্ষোভ জমছিল।

দুই পাড়া থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দমদম থানার একটি ফাঁড়ি রয়েছে। তা হলে কেন খবর পেল না পুলিশ? এরও কোনও সদুত্তর মেলেনি। শুধু পুলিশ সূত্রের খবর, দমদম থানায় পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নেই। যার ফলে সর্বত্র নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।

পুলিশ অবশ্য পরপর চুরির ঘটনায় নজরদারির অভাবের অভিযোগ মানতে নারাজ। তবে কালীপুজোর রাতে কেন পুলিশ খবর পেল না, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এক পুলিশকর্তা দাবি করেন, দমদমে কালীপুজোয় নিরাপত্তা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশ ব্যস্ত ছিল। ঘটনাস্থল বড় রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে গলির মধ্যে। ফলে তুলনায় সেখানে নজরদারি কম ছিল। বিশেষ সূত্রে খবর পেতেই পুলিশ গিয়ে ওই তরুণকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

তরুণের মৃত্যুর পরে যে ভাবে পাল্টা রবীন্দ্রনগরে হামলা চালানো হল, উঠেছে প্রশ্ন তা নিয়েও। প্রমোদনগরের বাসিন্দাদের একাংশের পাল্টা যুক্তি, একটি ছেলেকে স্রেফ পিটিয়ে মারা হল, তার পরে আর স্থির থাকতে পারেননি কেউ। ফলে হিংসার প্রেক্ষিতে অনায়াসেই ঘটে যায় পাল্টা হিংসার ঘটনা। নিরুত্তাপ প্রশাসনও। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা দক্ষিণ দমদমের চেয়ারম্যান পারিষদ প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘কালীপুজোর রাতে দুর্ঘটনায় আমার গোড়ালিতে আঘাত লাগে। তাই বাড়িতে ছিলাম। পরদিন ঘটনাটি শুনলাম। আইন আইনের পথে চলবে। পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

lynching Dumdum দমদম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy