আমহার্স্ট স্ট্রিটের একটি পুজোমণ্ডপে ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
আশঙ্কা সত্যি করে দুর্গাপুজোর বিধিভঙ্গের চিত্রই ফিরল কালীপুজোর রাতে। সন্ধ্যা যত গড়াল, ততই বেপরোয়া চেহারা নিল উৎসবমুখী জনতার ভিড়। এক সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, পুলিশের কোনও বিধিনিষেধই কাজে লাগল না। যা দেখে চিকিৎসক থেকে সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন, দুর্গাপুজোর পর থেকে বাড়তে শুরু করা সংক্রমণের লেখচিত্রকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলবে না তো কালীপুজোর রাতের এই ভিড়?
করোনাকালে জারি হওয়া নৈশ কার্ফু দুর্গাপুজোয় ১০ দিনের জন্য তুলে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। পরিস্থিতি সামলাতে মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তার পরেও দেখা গিয়েছে, রাতের কার্ফুতে ছাড়ের সুযোগ নিয়ে ভিড় ভেঙে পড়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। ভিড়ের চাপ এড়াতে একটি পুজোয় দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয় সরকারের তরফে। তাতেও করোনার সংক্রমণ আটকানো যায়নি বলেই চিকিৎসকদের মত।
দিনকয়েক আগে সরকার ঘোষণা করে, কালীপুজো এবং দীপাবলির রাতেও কার্ফুতে ছাড় থাকছে। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, নৈশ কার্ফুতে ছাড়ের জেরে দুর্গাপুজোয় ওই বাঁধভাঙা ভিড় দেখেও কালীপুজোর ক্ষেত্রে একই পথে হাঁটল প্রশাসন? এ ক্ষেত্রেও মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে দেখা গেল, রাস্তায় ঢল নেমেছে মানুষের। পুজোমণ্ডপে তো বটেই, গাদাগাদি ভিড় রেস্তোরাঁ ও পানশালাগুলির সামনেও। ভিড়ের নিরিখে প্রত্যাশা মতোই দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট। সেখানকার ‘ফাটাকেষ্ট’র পুজো নামে পরিচিত, নব যুবক সঙ্ঘের মণ্ডপের সামনে দেখা গিয়েছে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন। দূরত্ব-বিধি মানা তো পরের কথা, অধিকাংশের মুখ ছিল মাস্কহীন। পুজোর মালা দিতে হাজির হওয়া কয়েক হাজার লোকের ভিড়ে এক সময়ে মণ্ডপের গেট সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন উদ্যোক্তারা।
একই অবস্থা হয়েছে অঞ্জলির সময়ে। আদালতের নির্দেশ ছিল, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া থাকলেও মণ্ডপে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হয়নি প্রায় কোথাওই। ফাটাকেষ্ট-র পুজোতেই দেখা গিয়েছে, অঞ্জলি দিতে যাওয়া লোকের গাদাগাদি ভিড়। টালিগঞ্জ মুর অ্যাভিনিউয়ের রসা শক্তি সেবক সঙ্ঘ বা চেতলা, আলিপুর এবং কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন একাধিক পুজোতেও ছবিটা কম-বেশি এক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুজোর সময়ে কেউই মাস্ক পরে থাকেননি। বিধি উড়িয়ে চলেছে মণ্ডপ সংলগ্ন মেলা, চলেছে সেখানেই ভিড় করে খাওয়াদাওয়া। ভোগ বিতরণেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ম-বিধি মানা হয়নি বলেই অভিযোগ।
রাত যত বেড়েছে, ভিড়ের মধ্যে যানশাসনে নাজেহাল হয়েছে পুলিশ। কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোডের একাংশ বন্ধ রেখেও সামাল দেওয়া যায়নি গাড়ির চাপ। তারই মধ্যে হেলমেটহীন মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও তিন জন, কোথাও সওয়ার আবার চার জন! অবাধ্য বাইকের দৌরাত্ম্য রুখতে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তা মানছে বাহিনীরই একটি বড় অংশ। লালবাজারের যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা বললেন, ‘‘পুজোর রাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। কড়াকড়ি করার চেয়ে প্রশাসন এই সময়ে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের পক্ষে।’’ আজ শুক্রবার, দীপাবলিতে এবং কালী প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে তো? পুজোর রাতের ছবি দেখে সেই প্রশ্নটাই আরও জোরালো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy