দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুটি। — নিজস্ব চিত্র
রবিবার, দিওয়ালির সকালে হেলমেট ছাড়াই স্কুটি চালানোর মাসুল দিলেন চব্বিশ বছরের এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সমীর বিশ্বাস। বাড়ি বেহালায়। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন স্কুটির আর এক আরোহী প্রিয়াঙ্কা জানা। যোগেশচন্দ্র কলেজের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ সূত্রে খবর, পেশায় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী সমীর বেতনের টাকায় সপ্তাহ দুয়েক আগেই ওই স্কুটি কিনেছিলেন। শনিবার রাতে বান্ধবীর সঙ্গে স্কুটি নিয়ে শহরে কালীপুজো দেখতে বেরিয়েছিলেন। দু’জনের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ রবীন্দ্র সরোবর থেকে বেহালার বাড়িতে ফিরছিলেন সমীর। লেক গার্ডেন্স উড়ালপুল থেকে নেমে ডান দিকে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের দিকে বাঁক নিতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারে স্কুটিটি। সমীর ছিটকে রাস্তায় পাশে পড়ে যান। পিছনে বসে থাকা প্রিয়াঙ্কা ছিটকে পড়েন কিছুটা দূরে। তাঁদের এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা সমীরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। প্রিয়াঙ্কাকে পরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর ঘাড় ও পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে।
মোটরবাইক চালানোর সময়ে মাথায় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা ঠেকাতে সরকারি উদ্যোগে রাজ্য জুড়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ কর্মসূচি নেওয়া হলেও সাধারণ মানুষ সচেতনতার অভাবে হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক চালানোয় শহরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সমীরের পিছনেই মোটরবাইক চালিয়ে আসছিলেন তাঁর বন্ধু টোটন মণ্ডল। বেহালার বাসিন্দা, পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী টোটনের কথায়, ‘‘সকাল ছ’টা নাগাদ সমীর ফোন করে আমাকে লেকের কাছে যেতে বলে। সেই মতো আমি ওখানে যাই। ওদের মাথায় হেলমেট না থাকায় আমি আপত্তি করি। লেক থেকে বাড়ির দিকে ফিরতেই এই দুর্ঘটনা ঘটল। মাথায় হেলমেট থাকলে হয়ত বেঁচে যেত সমীর।’’
বেহালার প্রফুল্ল সেন কলোনির বাসিন্দা, পরিবহণ দফতরের অবসপ্রাপ্ত কর্মী শিবু বিশ্বাসের এক মাত্র ছেলে সমীর বছর তিনেক আগে একটি নিরাপত্তা সংস্থার চাকরিতে যোগ দেন। ছেলের অকাল মৃত্যুতে বাঙুর হাসপাতাল চত্বরে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন মা নমিতা বিশ্বাস। হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানো অপরাধ বলে মনে করেন শিবু বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘নিরাপত্তার বিষয়টি ছেলেকে বারবার বোঝাতাম। আমি বরাবরই মোটরবাইক কেনার বিপক্ষে ছিলাম। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক নিয়ে বেরোতে বারবার নিষেধ করতাম। তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’ শিববাবু জানান, অসুস্থ থাকায় শনিবার রাত ন’টা নাগাদ তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সমীরের মা সেই সময়ে ছিলেন পাশের পুজো মণ্ডপে। তখনই সমীর বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
তবে রবিবার সকালের এই দুর্ঘটনায় পুলিশের নজরদারি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। পুলিশেরই একাংশের প্রশ্ন, সমীর এবং প্রিয়াঙ্কা সারা রাত ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে হেলমেট ছাড়াই স্কুটি নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁদের ধরল না কেন? এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালালে পুলিশ বড়জোর ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করতে পারে। গ্রেফতারির কোনও আইন নেই।’’ ওই কর্তার যুক্তি, ‘‘যতই আইন করা হোক না কেন, চালক নিজে সচেতন না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy