Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

নেই সরকারি নির্দেশিকা, বিলের পার্থক্যে নাকাল রোগী

রোগীদের পরিবারের দাবি, ডাক্তার এবং নার্সদের পিপিই-মাস্ক বাবদ খরচ কোভিড রোগীর বিলে ইচ্ছেমতো ঢোকানো হচ্ছে। অথচ এই খরচ কোনও স্বাস্থ্য বিমা সংস্থা দেয় না।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৬:২৯
Share: Save:

কোভিড পরিস্থিতিতেও রোগীদের থেকে ইচ্ছেমতো বিল নেওয়ার অভিযোগ উঠছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। চিকিৎসাকর্মীদের ব্যবহারের জন্য কেনা পিপিই এবং মাস্কের এক-এক রকম দাম কোভিড রোগীদের থেকে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সেই সঙ্গে নন কোভিড ও কোভিড রোগীদের থেকে হাসপাতালগুলির জমা নেওয়া টাকার পরিমাণ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। পাশাপাশি, কিছু বেসরকারি হাসপাতালে জ্বরের রোগীর সঙ্গেই সাধারণ চিকিৎসার জন্য ভর্তি রোগীকে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে পরিবার।

রোগীদের পরিবারের দাবি, ডাক্তার এবং নার্সদের পিপিই-মাস্ক বাবদ খরচ কোভিড রোগীর বিলে ইচ্ছেমতো ঢোকানো হচ্ছে। অথচ এই খরচ কোনও স্বাস্থ্য বিমা সংস্থা দেয় না। ফলে পুরোটাই রোগীর পরিবার বহন করতে বাধ্য হচ্ছে। হাসপাতালগুলির মধ্যে এই খরচের কোনও সামঞ্জস্য নেই বলেই অভিযোগ। পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র জানান, তাঁরা ভর্তি থাকা কোভিড রোগীদের থেকে আটশো টাকা হিসেবে দিনে দু’টি করে পিপিই-র দাম নিচ্ছেন। মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের তরফে অলোক রায় জানান, তাঁরা কোভিড রোগীর বিলের সঙ্গে প্রতিটি সাতশো টাকা হিসেবে দিনে ২-৩টি পিপিই-র দাম ধরছেন। অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তারা প্রতি পিপিই-র দাম ধরছে হাজার টাকা। প্রতিদিন পিপিই ও মাস্ক বাবদ যে খরচ হয়, তা ওই দিন ভর্তি থাকা কোভিড রোগীদের বিলে সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিপিই-র জন্য রোগীদের থেকে আগে সাত হাজার টাকা নিতেন, এখন পাঁচ হাজার নিচ্ছেন।

খরচের এই অসামঞ্জস্যের কারণ হিসেবে পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্তবাবু বলেন, “করোনার চিকিৎসায় সুরক্ষা খাতের খরচ কী ভাবে এবং কত ধার্য হবে এই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা না থাকাই পার্থক্যের কারণ।’’

আরও পড়ুন: নিছকই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, বোড়াল শ্মশানের ভিডিয়ো প্রসঙ্গে মন্তব্য রাজ্যের

সেই সঙ্গে জ্বরের রোগীর পাশেই সাধারণ রোগীদের রেখে চিকিৎসা করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তলপেটে ব্যথা নিয়ে ৭ জুন ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষক অশ্রুজিৎ নন্দী। তাঁর অভিযোগ, দেড় দিন চিকিৎসার পরে ছাড়া পাওয়ার সময়ে তিনি জানতে পারেন, জেনারেল ওয়ার্ডে তাঁর উল্টো দিকের শয্যায় যিনি ছিলেন তাঁর কোভিড পরীক্ষার দ্বিতীয় রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। যাঁর সঙ্গে তিনি এক শৌচালয় ব্যবহার করেছেন!

আরও পড়ুন: মহুয়াকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের নিশানায় ‘ললিপপ’ ধনখড়​

গত ১১ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ইমেলে সেই অভিযোগ জানান তিনি। অশ্রুজিতের কথায়, ‘‘পেট ব্যথার জন্য জেনারেল ওয়ার্ডের ৩২০৯ নম্বর শয্যায় ভর্তি ছিলাম দেড় দিন। ৫০ হাজার টাকা বিল হয়েছিল। ২০ হাজার টাকা আগাম দিয়েছি। এর বদলে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক নিয়ে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়রান্টিনে থাকছি। বাড়িতে বৃদ্ধা মা আছেন। স্ত্রী আছেন। কিছু দিন পরে তিন জনকেই কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে।’’ তাঁর প্রশ্ন, যে রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি এবং যাঁর চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি, তাঁকে কী ভাবে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রাখা হয়?

সব শুনে আমরির সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, “এ রকম হওয়ার কথা নয়! তবু বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”

বিলের বিষয়ে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে নিয়ম হয়েছিল, ভর্তি হতে যে কোনও রোগীকে স্বাস্থ্য বিমা থাকলে দেড় লক্ষ টাকা এবং না থাকলে ১ লক্ষ টাকা আগাম জমা করতে হবে। গত ৯ জুন তা কমে ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। গ্রিন জ়োন থেকে রোগী এলে এখন আগাম ১০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, খরচ বেড়েছে কিন্তু রোগী কমেছে। ফলে এই পরিবর্তন।

বেসরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে কোভিড চিকিৎসার খরচ নিয়ে কেন সরকারি নির্দেশিকা নেই, সে বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus hospital COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy