—প্রতীকী ছবি
না ছিল কোনও তথ্যপ্রমাণ, না ছিল তাঁদের অপরাধের কোনও পূর্ব ইতিহাস। অথচ এক বছর জেল খাটলেন তাঁরা। আর এক বছর পরে জানা গেল, যে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল, সেই অভিযোগ আদালতের কাছে ভিত্তিহীন। প্রশ্ন উঠল ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের ভূমিকা নিয়েও।
২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি। ভিন্ রাজ্য থেকে কলকাতায় আসা দুই যুবককে টালাপার্ক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে এসেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। ওই যুবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁদের কাছে ২০ কিলোগ্রাম সাদা রঙের পাউডার পাওয়া গিয়েছে, যা আদতে নিষিদ্ধ মাদক
হেরোইন বলেই সন্দেহ ছিল পুলিশের। দুই যুবকের এক জন মণিপুরের বাসিন্দা। পুলিশের সন্দেহের কারণ ছিল, মাদক চোরাচালানের সঙ্গে ওই রাজ্যের যুবকদের নাম প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে।
প্রায় এক বছর আগের সেই ঘটনায় মণিপুরের তবোল জেলার ফয়েজউদ্দিন শেখ ও উত্তরপ্রদেশের সারওয়ান জেলার জুবের খান কার্যত পায়ে ধরে পুলিশের কাছে নিজেদের বেকসুর বলে দাবি করেছিলেন। নিজেদের মৎস্যজীবী বলে দাবি করে বার বার তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, কলকাতায় তাঁরা বড়বাজারে এসেছিলেন মাছের খাবার কিনতে। টালাপার্কের বস্তিতে রাত কাটিয়ে তাঁরা ফিরে যাবেন যে যাঁর রাজ্যে। ওই সাদা পাউডার আদতে মাছের খাবার। যা পুকুরের জলে ফেলার পরে সব মাছ এক জায়গায় চলে আসে। তখন জাল ফেলে মাছ ধরতে সুবিধা হয়। অভিযোগ, দুই যুবকের কোনও কথা না শুনে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে পরের দিনই আদালতে পেশ করে।
আরও পড়ুন: আড়াই মাস পর কুড়ির নীচে মৃত্যু, দৈনিক আক্রান্ত হাজারেরও কম
আরও পড়ুন: ধর্মান্তরণের অভিযোগ মিথ্যা, হলফনামায় স্বীকার করল যোগী সরকার
মাদক আইনে ধৃত ফয়েজউদ্দিন ও জুবেরের জায়গা হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। টানা একটি বছর সেখানেই ছিলেন তাঁরা। তাঁদের থেকে বাজেয়াপ্ত করা ওই সাদা পাউডার পাঠানো হয়েছিল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সেই ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ওই পাউডার মাদক নয়! তার পরে এ দিন আদালত ওই দুই যুবককে রেহাই দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
ঘটনার পরে আদালতেই এ দিন প্রশ্ন উঠেছে, শেষ এক বছর ওই দুই মৎস্যজীবীকে কে ফিরিয়ে দেবে? যদি তাঁরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে গত এক বছর ধরে পরিবার দু’টিকে যে নতিস্বীকার করতে হয়েছে, তার দায় কে নেবে? গ্রেফতারের আগে কেন তদন্ত করে দেখা হল না? টালাপার্কের একটি বস্তিতে ছ’কোটি টাকার মাদক খোলা অবস্থায় নিয়ে কেন দুই যুবক বসে থাকবেন? যে পুলিশকর্মীদের জন্য দুই যুবকের জীবনের মূল্যবান এক বছর কারাগারে কাটল, তাঁদের কী শাস্তি হবে?
কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান অপরাজিতা রাই ফোনে এবং এসএমএসে কোনও জবাব দেননি। ওই দুই যুবকের আইনজীবী মিঠু দাস জানিয়েছেন, মিথ্যা মামলায় এক বছর জেলে থাকার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে ওই দুই যুবক উচ্চ আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করবেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিও করা হবে। মিঠুদেবীর কথায়, ‘‘ওই দু’জনের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তা ছাড়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন বলে ভয়ে পরিবারের লোকজন এখন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও বন্ধ করে দিয়েছেন।’’ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিচারক তদন্তকারী অফিসারের পেশ করা সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পর্যবেক্ষণ করে ওই দু’জনকে মুক্তি দিয়েছেন।’’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই যুবককে এক বছর আগে আদালতে পেশ করার সময়ে তাঁদের থেকে উদ্ধার হওয়া পাউডারের নমুনা আদালতে জমা দেয় পুলিশ। আদালতের নির্দেশে এ রাজ্যের সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ওই নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। মাসখানেক পরে ওই নমুনায় মাদকের উপস্থিতি নেই বলে জানিয়ে দেয় ল্যাবরেটরি। ফের আদালতের নির্দেশে ওই নমুনা হায়দরাবাদের ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রের খবর, এই বছরের ৫ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী অফিসার আদালতকে জানান যে, যে হায়দরাবাদ থেকেও বলা হয়েছে ওই নমুনায় মাদকের কোনও উপস্থিতি নেই। আর ওই দিনই আদালতে চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই দু’জনকে মাদক মামলার ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
বৃহস্পতিবার বিচারক পার্থপ্রতিম দাস জুবের ও ফয়েজউদ্দিনকে ওই মামলা থেকে মুক্তি দেন। এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন জুবের ও ফয়েজউদ্দিন। আদালত চত্বরে দু’জন বলেন, ‘‘আমরা মাছের খাবার কিনেছিলাম। তা পুলিশকে একাধিক বার বলেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথায় কোনও কান দেয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy