রাতে খাওয়ার পরেই বুকের বাঁদিকে ব্যথা অনুভব করেছিলেন কসবার গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়। ভেবেছিলেন হজমের গণ্ডগোল। রাত আড়াইটে নাগাদ ব্যথা বাড়লে স্ত্রী ও ছেলে ঠিক করেন হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অত রাতে গাড়ি জোগাড় করতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। শেষে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি গৌতমবাবুকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ৯০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত।
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞেরাই জানাচ্ছেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরের ৯০ মিনিটকে বলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। হৃৎপিন্ডের পেশিগুলি পুনর্জীবিত করার জন্য আদর্শ ওই সময়। তখন যত দ্রুত রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করা যায়, ততই কমে ঝুঁকি। অথচ ওই ৯০ মিনিটে অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান না। ফলে বাড়ে জীবনের ঝুঁকি।
এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে শহরের কিছু বেসরকারি হাসপাতাল চালু করেছে নতুন পরিষেবা। তৈরি হয়েছে আলাদা বিভাগ। এ ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যায় আপৎকালীন নম্বরে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে যাবে রোগীর বাড়ি। যাতে থাকবেন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন সহকারী চিকিৎসক, দু’জন প্রশিক্ষিত নার্স ও এক হাসপাতাল কর্মী। রোগীকে পরীক্ষার পরে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝলে বাড়িতেই কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) করা হবে। প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, ওষুধ থাকবে অ্যাম্বুল্যান্সে।
ওই সব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই ৯০ মিনিটের মধ্যেই যাতে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাই এই ভাবনা। কোনও হাসপাতাল এই বিভাগের নাম দিয়েছে ‘কার্ডিয়াক অ্যাম্বুল্যান্স’, কেউ বলছে ‘চেস্ট পেন র্যাপিড রেসপন্ডার সার্ভিস’। কোথাও এই বিভাগে অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা ১৫, কোথাও ২০।
মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের জোনাল ডিরেক্টর (ইস্ট) আর ভেঙ্কটেশ বলেন, ‘‘আমাদের চব্বিশ ঘণ্টা পরিষেবা চালু রয়েছে।
কেউ যোগাযোগ করলেই দ্রুত কার্ডিও অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাই।’’ ক’দিন আগে এই পরিষেবা চালু হয়েছে ইএম বাইপাসের আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানকার চেয়ারম্যান, চিকিৎসক অলোক রায় জানান, প্রত্যেক রোগীর দরজায় এই পরিষেবা পৌঁছে যাবে। দরকারে অ্যাম্বুল্যান্স টিমের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞেরা ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ করবেন।
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুনীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করালে হৃৎপিন্ডকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে। এ ধরনের পরিষেবা যত বাড়বে, ততই উপকার।’’ হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৯০ মিনিটের মধ্যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাতে পারলে তবেই কার্যকারিতা থাকে। কিন্তু সময় ও দূরত্বের জন্য অধিকাংশ সময়ে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ পার হয়ে যায়।’’
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা উন্নত করার পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পূর্ণ এড়াতে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সচেতনতা দরকার। বুকে ব্যথা বা শারীরিক অসুবিধা হলে তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy