ছবি: সংগৃহীত।
গণপরিবহণে আসন সংরক্ষণের দাবি ছিল অনেক দিনই। অবশেষে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের সেই দাবি আংশিক পূরণ হতে চলেছে। আগামী শুক্রবার থেকে বাঁশদ্রোণী-বাবুঘাট রুটের ২০৫ এবং ২০৫-এ নম্বরের মোট ৩৬টি বাসে একটি করে আসন সংরক্ষিত থাকবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য। সেই আসনের নাম হবে ‘ত্রি-ধারা’। আসনটি যে সংরক্ষিত, তা বোঝাতে থাকবে সাঙ্কেতিক চিহ্নও। আর ভেদাভেদ ভুলে সকল মানুষকে সম্মান করার বার্তা লেখা থাকবে ওই সব বাসের গায়ে।
এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন যে যুবক, তিনি অবশ্য পরিচিত ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ হিসেবে। বাঁশদ্রোণীর ওই যুবক শোভন মুখোপাধ্যায় গত কয়েক বছর ধরেই শহরের গণশৌচাগারে কম মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার ব্যবস্থা করে আসছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এর আগে বাঁশদ্রোণী এলাকার গণশৌচাগারে যাতে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা অবাধে প্রবেশ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করেছেন। এ বার গণপরিবহণে তাঁদের জন্য আসন সংরক্ষণ লক্ষ্য তাঁর। শোভন বলছেন, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য শহরের সমস্ত বাসে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল লাগবে।’’ তাঁর এই ভাবনার বাস্তবায়নে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বাসমালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস-এর কর্মকর্তা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পাশে রয়েছি। ব্যক্তিগত ভাবেও ওই উদ্যোগের পাশে থাকব। আগামী দিনে শহরের সব বেসরকারি বাসে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের জন্য আসন সংরক্ষণে উদ্যোগী হব।’’
তৃতীয় লিঙ্গের জন্য আসন সংরক্ষণের ভাবনা এল কোথা থেকে? শোভন জানাচ্ছেন, বছর চারেক আগে মেট্রোয় এক রূপান্তরকামীকে হেনস্থার খবর জেনে চমকে উঠেছিলেন। ‘‘রূপান্তরিত ও রূপান্তরকামীদের জন্য গণপরিবহণ ব্যবস্থায় আসন সংরক্ষণ যে কত জরুরি, সে দিন তা বুঝতে পেরেছিলাম। তাই এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে এ নিয়ে কথা হলে তিনিও এই উদ্যোগে শামিল হন।’’— বলছেন শোভন। আর স্থানীয় ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর অনিতা করমজুমদার বলছেন, ‘‘শোভনের ভাবনার কথা বাঁশদ্রোণীর ওই দু’টি রুটের বাস ইউনিয়নকে জানালে তাঁরা প্রস্তাব মেনে নেন। ১৪ অগস্ট এই ভাবনা বাস্তবায়িত হবে।’’ ওই দুই রুটের বাস ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অরবিন্দ হালদার বলেন, ‘‘শোভনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সংরক্ষিত আসনগুলি চিহ্নিত করার জন্য তাতে সাঙ্কেতিক চিহ্ন সাঁটানো হবে।’’
শোভনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় রীতিমতো খুশি তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা। তাঁদের একটি সংগঠনের কর্মী রঞ্জিতা সিংহের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট রূপান্তরকামী সম্প্রদায়কে তৃতীয় লিঙ্গের মর্যাদা দিলেও আমাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এখনও তৈরি হয়নি। এখনও আমরা বৈষম্যের শিকার, আমাদের উপরে হামলার ঘটনাও ঘটে অহরহ। সেখানে শোভনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। এই লড়াইয়ে শোভনকে পাশে পেয়ে আমরা গর্বিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy