Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Murder

গাড়িতে গুলির টুকরো, দমদমে তরুণের রহস্য মৃত্যু, পিছনে ত্রিকোণ প্রেম?

ওই তরুণীর সূত্রে মৃত তরুণের পরিবার জানতে পেরেছে, নামিয়ে দেওয়ার পরও রাত ২টো ৮ মিনিটে এক বার ফোনে দেবাঞ্জনের সঙ্গে কথা হয় ওই তরুণীর।

এই গাড়িতেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় দেবাঞ্জনকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এই গাড়িতেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় দেবাঞ্জনকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৪৩
Share: Save:

বান্ধবীকে বাড়িতে নামিয়ে ফেরার পথে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল এক তরুণের। তাঁর গাড়ির মধ্যে পাওয়া গিয়েছে ‘বুলেট হেড’। পরিবারের অভিযোগ, ওই তরুণকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ খুনের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছে। যদিও পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে দেবাঞ্জন দাস (২০) নামের ওই তরুণের। মৃত্যু রহস্যের সঙ্গে উঠে আসছে ত্রিকোণ প্রেমের প্রসঙ্গও।

ঘটনার সূত্রপাত ৭ অক্টোবর অর্থাৎ নবমীর গভীর রাতে। সল্টলেকের একটি নামী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া ছিল দেবাঞ্জন। দমদমের ৪ নম্বর রেল গেট এলাকায় তাঁর বাড়ি। বাবা অরুণ দাস পেশায় ব্যবসায়ী। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন রাত পৌনে তিনটে নাগাদ দমদম এলাকার বঙ্কিম মোড়ে নিজের সেডান গাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় দেবাঞ্জনকে। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। অরুণ জানিয়েছেন, পাড়ারই কয়েক জন যুবকের মাধ্যমে পুলিশ খবর পাঠায় বাড়িতে।

প্রাথমিক তদন্তের পর নিমতা থানার এএসআই গৌতম ঘোষ দাবি করেন, কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশে একটি ল্যাম্প পোস্টে ধাক্কা মারে দেবাঞ্জনের গাড়ি। তার পর ফের পাশের একটি পাঁচিলে ধাক্কা মারে। আর তাতেই ফুসফুসে আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয় ওই তরুণের। পুলিশের দাবি, দেবাঞ্জন সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। তাই গুরুতর আঘাত লাগে। যদিও পুলিশের এই দুর্ঘটনার তত্ত্ব মানতে রাজি নন দেবাঞ্জনের বাবা এবং তাঁদের প্রতিবেশীরা যাঁরা ওই রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। অরুণ বুধবার বলেন, ‘‘যদি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হবে, তা হলে গাড়ির মধ্যে সামনের সিটের পা রাখার অংশে বুলেট হেড পাওয়া যাবে কেন?” তিনি পুলিশের দেওয়া দুর্ঘটনার তত্ত্ব খারিজ করে দিয়ে বলেন, ‘‘গাড়ির বাঁ দিকে সামনের অংশ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইটুকু ধাক্কায় গাড়ির চালক মারা যেতে পারে না।”

আরও পড়ুন: রাস্তা যানজট মুক্ত রাখতে নির্দেশ নগরপালের, কিন্তু টালা সেতু নিয়ে হিমশিম খেল পুলিশ

অরুণ জানিয়েছেন, নবমীর দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন তাঁর ছেলে দেবাঞ্জন (বুবুন)। বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার পর ওর বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছি, বুবুন ওই রাতে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের একটি রেস্তরাঁয় গিয়েছিল।” আর সেখান থেকেই প্রকাশ্যে এসেছে নিমতা সর্দার পাড়া এলাকার এক তরুণী কৃষ্ণা সরকার (নাম পরিবর্তিত)-এর নাম। পরিবারের দাবি, দেবাঞ্জনের বন্ধুদের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, ওই রাতে ওই তরুণীও ছিলেন তাঁদের ছেলের সঙ্গে। অরুণ বলেন, ‘‘আড়াই মাস ধরে ওদের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ওই রাতে রেস্তরাঁ থেকে দেড়টা নাগাদ রওনা হয় সবাই। ওই তরুণী গাড়িতে ছিলেন। তাঁকে রাত ২টো ৪ মিনিট নাগাদ বাড়িতে নামায় বুবুন।” ওই তরুণীর সূত্রে মৃত তরুণের পরিবার জানতে পেরেছে, নামিয়ে দেওয়ার পরও রাত ২টো ৮ মিনিটে এক বার ফোনে দেবাঞ্জনের সঙ্গে কথা হয় ওই তরুণীর। এর পর ২টো ১৬ মিনিটে ফের এক বার ফোন করেন দেবাঞ্জন। কিন্তু সেই সময় ওই তরুণী ফোনটি ধরতে পারেনি। তিনি ২টো ২১ মিনিটে ফের এক বার ফোন করে। তখন আর ফোন ধরেনি দেবাঞ্জন। সেখান থেকে পরিবারের ধারণা, তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে দেবাঞ্জনের।

পরিবারের দাবি গুলির এই টুকরোটিই পাওয়া গিয়েছে দেবাঞ্জনের গাড়ির ভিতরে। নিজস্ব চিত্র।

অরুণ বাবুর অভিযোগ, ওই তরুণীর সঙ্গে প্রিন্স সিংহ নামে অন্য এক যুবকের দীর্ঘ তিন বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক ভেঙে দেবাঞ্জনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। তা নিয়ে প্রিন্সের সঙ্গে দেবাঞ্জন এবং ওই তরুণীর বিতণ্ডাও হয়েছে। অভিযোগ, দেবাঞ্জনকে ফোন করে প্রিন্স হুমকিও দিয়েছেন দিন পনেরো আগে। অরুণবাবুর অভিযোগ, খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দেবাঞ্জনকে। আর সেই কারণেই বুলেট হেড দেহ ফুঁড়ে বাইরে বেরিয়ে গাড়ির মধ্যে আটকে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই সমস্ত তথ্য পুলিশকে জানিয়ে খুনের মামলা শুরু করতে বলেছিলাম। কিন্তু পুলিশ খুনের অভিযোগ নিতে চায়নি। বারে বারে দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করেছে।”

আরও পড়ুন: গভীর রাতে পানশালায় বেআইনি নাচগান, গায়িকাকে হেনস্থা, পুলিশের জালে পাণ্ডারা

দেবাঞ্জনের বাড়ির পাশেই থাকেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি গোটা ঘটনার কথা জানি। বার বার থানা থেকে ওঁদের নানা অছিলায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে না।”

এ প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘ওই পরিবারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা থানায় এলেই অভিযোগ নেওয়া হবে। তাঁদের আজও থানার অফিসার ইন চার্জ ফোন করে ডেকেছিলেন অভিযোগ জানাতে। তাঁরা এখনও যাননি।” কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দাস পরিবারকে জানিয়েছে, এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসেনি। সেই রিপোর্ট এলেই সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Barrackpore Police Gunshot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy