স্বামীর সঙ্গে রোমিতা
সদ্য ব্যাঙ্কের চাকরি পেয়েছিলেন তরুণী। শুক্রবার ছিল চাকরির পঞ্চম দিন। তবে এ দিন আর কর্মস্থলে যাওয়া হয়নি গড়িয়া উত্তর শ্রীরামপুরের বাসিন্দা রোমিতা ভট্টাচার্যের (২৬)। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। বাড়ির লোকজন রোমিতাকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রোমিতা। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ। তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন রোমিতার স্বামী, শাশুড়ি এবং শ্বশুরের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাটুলি থানার পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ (বধূ নির্যাতন) এবং ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া) ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। মৃতার স্বামী শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়কে এ দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোমিতার মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। আজ, শনিবার তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা।
রোমিতার দিদি রিনিতা দাস ভট্টাচার্যের অভিযোগ, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ব্যাঙ্ককর্মী শুভ্রজ্যোতির সঙ্গে তাঁর বোনের বিয়ে হয়। রোমিতার শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুর, শাশুড়ি ছাড়াও তাঁর এক ভাশুর সপরিবার থাকেন। রিনিতার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই নানা ভাবে নির্যাতন চালানো হত রোমিতার উপরে। ভাশুরের স্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার। তিনি চাকরি করেন। অভিযোগ, শাশুড়ি সে জন্য নিয়ম করে দিয়েছিলেন যে, বড় বৌ বাড়ির কোনও কাজ করবেন না। সব সামলাতে হবে ছোট বৌ রোমিতাকেই। এমনকি, বড় বৌয়ের ছেলেকেও দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল রোমিতার উপরেই। এই সমস্যার কথা রোমিতা নিজের বাড়িতেও জানিয়েছিলেন। রিনিতা বলেন, ‘‘আমরা ওকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু বোন স্বামীকে ছেড়ে এ ভাবে থাকতে চায়নি। আমার বোন মানিয়ে নেওয়ারই চেষ্টা করেছিল।’’
রোমিতার পরিজনেদের অভিযোগ, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তিনি চাকরি পাওয়ার খবর আসতেই শ্বশুরবাড়িতে সমস্যা বাড়তে থাকে। রিনিতার বক্তব্য, ‘‘বোন বাড়ির কাজ ফেলে কেন চাকরি করতে বেরোবে, এ নিয়ে ওর শাশুড়ি মারাত্মক অশান্তি শুরু করেন। কোনও ভাবেই বোন আর পেরে উঠছিল না। আগামী রবিবার ওর ভাশুরের একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানেও আমাদের কাউকে ডাকা হয়নি। তা নিয়েও শাশুড়ির সঙ্গে সমস্যা হয় গতকাল। এর পরেই হয়তো নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বোন। আমাকে ফোন করে ওই অশান্তির কথা জানিয়েছিল।’’
রোমিতার পরিজনেদের দাবি, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁদের ফোন করে দ্রুত বাইপাসের হাসপাতালে চলে আসতে বলেন রোমিতার ভাশুর। জানানো হয়, রোমিতা অসুস্থ। হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, রোমিতার মৃত্যু হয়েছে। রোমিতার বাবা-মা থাকেন মধ্যমগ্রামের নন্দনকানন এলাকায়। সেখানকার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুকুমার মণ্ডল জানান, মৃতার পরিজনেদের সঙ্গে এ দিন হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনিও। তাঁর দাবি, ‘‘এটা পরিকল্পনা করে খুনের মতোই। নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে মেয়েটা আর পেরে ওঠেনি।’’
রোমিতার মা মীরা ভট্টাচার্য এ দিন ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘সমাজ কী বলত, বুঝে নিতাম। ও কেন আমাদের কাছে চলে এল না? এ ভাবে কেন সব শেষ করে দিল?’’
সে উত্তর পাওয়ার অবশ্য আর উপায় নেই। বিষয়টির তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy