শ্রেয়াংশ জয়সওয়াল। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগেই বাড়ির কাছে রাস্তায় পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পেয়েছিলেন বাবা। তাঁকে দেখতেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাওড়ার দিদিমার বাড়ি থেকে ছেলে ফিরছিল মানিকতলায় নিজেদের বাড়িতে। কিন্তু বাবাকে আর দেখা হল না তার। পুলিশ জানায়, তার আগেই হাওড়া সেতুর উপরে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে শ্রেয়াংশ জয়সওয়াল নামে বছর সতেরোর সেই কিশোরের। মৃত ছেলেকে দেখতে বাবাকেই ছুটতে হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
তবে এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, হাওড়া সেতুর ৩৭ নম্বর পিলারের কাছে এক কিশোর বাস থেকে পড়ে গিয়ে চাকায় পিষ্ট হয়েছে বলে তাদের কাছে খবর আসে। পুলিশ গিয়ে কিশোরকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, হাওড়া থেকে মেটিয়াবুরুজগামী একটি মিনিবাস থেকে নামতে গিয়েই ওই কিশোর পড়ে যায়। বাসের পিছনের চাকা তার কোমরের উপর দিয়ে চলে যায়। চালক-সহ বাসটি আটক করেছে পুলিশ।
কিন্তু মৃতের পরিবারের দাবি, শ্রেয়াংশের দিদিমার বাড়ি হাওড়ার কিংস রোডে। সেখান থেকে সরাসরি মানিকতলার বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। তার পরিবারের প্রশ্ন, মানিকতলা আসার জন্য শ্রেয়াংশ হাওড়া-মেটিয়াবুরুজ রুটের বাসে উঠবে কেন? কেনই বা হাওড়া সেতুর উপরে ৩৭ নম্বর পিলারের কাছে চলন্ত বাস থেকে নামতে যাবে সে? শ্রেয়াংশের কাকা সন্দীপ জয়সওয়াল বুধবার বলেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছিল তা-ই তো আমরা বুঝতে পারছি না। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলছে। কখনও বলছে, যে বাস থেকে শ্রেয়াংশ পড়ে গিয়েছিল সেটিরই চাকা তার কোমরের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল। কখনও বলছে, পড়ে যাওয়ার পরে অন্য বাস ওকে পিষে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, ভুল বাসে উঠলেও হাওড়া সেতুর মাঝখানে কেউ কেন নামতে যাবে?’’
হাওড়া সেতুর ৩৭ নম্বর পিলারটি কলকাতা পুলিশের উত্তর বন্দর থানার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, মৃত্যুর আগে হাসপাতালে দেওয়া জবানবন্দিতে শ্রেয়াংশ বাস থেকে পড়ে যাওয়ার কথাই জানিয়েছিল। তবে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। অন্য সূত্র থেকে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে শ্রেয়াংশ অন্য কোথাও গিয়েছিল কি না, বা তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কি না।
এ দিন মানিকতলার যোগীপাড়া বাইলেনে শ্রেয়াংশদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাদের তিনতলা বাড়ির সামনে যেন উঠে এসেছে গোটা পাড়া। শোকে ভেঙে পড়েছেন মৃত কিশোরের মা। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। কোমরের আঘাত নিয়েই বাবা রাকেশ জয়সওয়াল ছুটেছেন ছেলের ময়না-তদন্তের কাগজপত্রের জন্য। পরিবার সূত্রের খবর, শ্রেয়াংশ বহু দিন থেকেই এ বাড়িতে থাকত না। দিদিমার বাড়িতে থেকে সে হাওড়ার একটি মুক্ত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, নাতির মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারাচ্ছেন ওই বৃদ্ধা। এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘দিদিমাকে রাখা যাচ্ছে না। আমরা ওর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy