Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘কহানি’র মরসুমেই আর এক বব বিশ্বাস

একগাল হেসে ঠিক তিনটে শব্দ — ‘‘নমস্কার...এক মিনিট।’’ তার পর, পলক পড়ার আগেই ব্যাগ থেকে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল বার করে গুলি। শিকার খতম। এটাই ছিল ভাড়াটে খুনি বব বিশ্বাসের অপারেশন করার স্টাইল।

শিল্পীর কল্পনায়। অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

শিল্পীর কল্পনায়। অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০২
Share: Save:

একগাল হেসে ঠিক তিনটে শব্দ — ‘‘নমস্কার...এক মিনিট।’’ তার পর, পলক পড়ার আগেই ব্যাগ থেকে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল বার করে গুলি। শিকার খতম। এটাই ছিল ভাড়াটে খুনি বব বিশ্বাসের অপারেশন করার স্টাইল।

বব বিশ্বাস। ‘কহানি’ ছবির সেই গোবেচারা চেহারার ভয়ঙ্কর খুনি। বিদ্যা বালনের ‘কহানি টু’ আসছে ২ ডিসেম্বর। এ বার বব বিশ্বাসের চরিত্রটা নেই। তাতে কী? কাকতালীয় ভাবে এখনই বাস্তবের এক বব বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে তৎপর লালবাজার। দেড় দশকের পুরনো, কিনারা না হওয়া, শহরের একটি খুনের মামলায় নতুন ভাবে আততায়ীর অনুসন্ধান করার সূত্রে। সেই ভাড়াটে খুনির নাম অবশ্যই বব বিশ্বাস নয়। চেহারাতেও মিল নেই। তবে সে-ও চুপচাপ খুব কাছে এসে শিকারকে একটি গুলিতে শেষ করত। ববের মতোই তাকে সুপারি দেওয়ার পরে নিশ্চিন্ত থাকা যেত।

২০০১-এর সেই খুনের উদ্দেশ্য খুঁজতে গিয়ে সমসাময়িক আর একটি আলোড়ন ফেলে দেওয়া বিষয়ের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেটা হল, কালা ধন বা ‘ব্ল্যাক মানি’। একটি সম্পত্তি কেনাবেচার দৌলতে বিশাল অঙ্কের সাদা টাকা ছাড়াও পাওয়া গিয়েছিল হিসেব বহির্ভূত নগদ ২৫ কোটি টাকা। গত ১৫ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসেবে রাখলে আজ যার মূল্য প্রায় ৭০ কোটি। সেই টাকা গচ্ছিত রাখা হয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু পরে তা উদ্ধার করতে না পেরেই বাস্তবের বব বিশ্বাসকে দিয়ে ওই খুন করানো হয় বলে সম্প্রতি কিছু সূত্র পেয়েছেন পুলিশের একাংশ।

২০০১-এর ২৯ জুন। সকাল ৯টা বাজতে তখনও মিনিট দশেক বাকি। ব্যস্ত অফিসপাড়া বিবাদী বাগের কাছে আর এন মুখার্জি রোডে হঠাৎই টায়ার ফাটার মতো শব্দ। কিছু পরে দেখা গেল, ট্রাম কোম্পানির অফিসের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এক মধ্যবয়সী মহিলা। মাথায় গুলির গভীর ক্ষত। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানান, শব্দ হওয়ার ঠিক পরেই তাঁরা একটি স্কুটারকে হুশ করে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন। সেই স্কুটারেই একা ছিল সে— মানে বাস্তবের সেই বব বিশ্বাস।

নিহতের নাম নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়া (৫২)। পার্সি ওই মহিলা ঘটনাস্থলের কাছেই থাকতেন। চাকরি করতেন এক বহুজাতিক সংস্থায়। সে দিনও অফিস যাওয়ার পথেই ওই ঘট‌না।

কলকাতা পুলিশের ফাইলে কিনারা না হওয়া খুনের মামলা গত দেড়-দু’দশকে আরও আছে। তালতলার দীপ্তি ডিক্রুজ, ট্যাংরার নাবালক হাসান ইকবাল ওরফে মিস্টার— তালিকাটা খুব ছোট না। তবে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গুলিতে খুন হওয়া ঘটনার মধ্যে এই একটিরই কিনারা হওয়া বাকি।’’

লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই মামলার ফাইল এত দিন বন্ধ ছিল, এখন কিছু তথ্য হাতে এসেছে। সমাধানের পথ পরিষ্কার হলেই ফাইল ফের খোলা হবে।’’ লালবাজারের শীর্ষ মহল থেকে খুনের মামলাটি সম্পর্কে নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘গুলি চালিয়ে খুনের ঘটনায় সাধারণত রহস্য বেশি দিন চাপা থাকে না। বন্দুক-গুলি কোথা থেকে এল, সুপারি কে দিয়েছিল, ব্যক্তিগত আক্রোশে কি না, হলে কী আক্রোশ— কোনও না কোনও ভাবে সূত্র বেরিয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে তখন কিছুই জানা যায়নি।’’

এখন জানা যাচ্ছে, সেই সম্ভাব্য খুনি বা বাস্তবের বব বিশ্বাস বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকাতেও বেশ কয়েকটি ‘কনট্র্যাক্ট কিলিং’ করেছিল নয়ের দশকের শেষ দিকে। সেগুলি সবই প্রোমোটিং ও তোলাবাজি নিয়ে দু’পক্ষের গণ্ডগোলের জেরে। কিন্তু ওই সব ঘট‌নাতেও সে অধরাই থেকে গিয়েছে। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘ওই সব ঘটনায় তখন নাম হয়েছিল যিশু আর টিশু-র। ওরা অবশ্যই ছিল, তবে নেপথ্যে। ট্রিগার যে বহু ক্ষেত্রেই চেপেছিল, তাকে ধরা যায়নি।’’ পুলিশ জেনেছে, এখন মধ্য চল্লিশ পেরোনো সেই ভাড়াটে খুনি প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা, ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসায় যুক্ত।

কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘কহানি-র বব বিশ্বাসের মুখোশ ছিল গোবেচারা চেহারাটা। আমরা যার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছি, বাস্তবের সেই বব বিশ্বাস সুদর্শন, গালে হাল্কা চাপদাড়ি, ফর্সা রং, হিরোর মতো চেহারা। খুন করে যখন স্কুটার নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, ওই চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে সে ঘাতক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy